বই নোট || ইকামাতে দ্বীন || অধ্যাপক গোলাম আজম

 

📖বই নোট

#ইক্বামাতে_দ্বীন

লেখকঃ মরহুম অধ্যাপক গোলাম আজম

-------------------------------------------- 


#প্রাথমিক_কথাঃ

১৯৭৮ সালে ‘বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন’ নামে প্রথম প্রকাশিত এবং ১৯৮১ সালের তৃতীয় সংস্করণ থেকে “ইসলামী ঐক্য ইসলামী আন্দোলন” নামে লেখা পুস্তিকার দ্বিতীয় সিরিজ হিসেবে প্রকাশিত ‘ইকামাতে দ্বীন’। 


#দ্বীনি_দায়িত্ব_পালনের_দুটি_দিক_রয়েছেঃ

১. খিদমাতে দ্বীন,

২. ইক্বামাতে দ্বীন। 


মাদ্রাসা, মসজিদ, খানকাহ, ওয়াজ, তাবলীগ, ইসলামী সাহিত্য ইত্যাদির মাধ্যমে দ্বীন-ইসলামের যে, বিরাট খেদমত হচ্ছে তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করে প্রমাণ করা হয়েছে যে, প্রত্যেক প্রকার খেদমতই অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ; সকলের খেদমত মিলেই ইসলামের মর্যাদা বৃদ্ধি করছে এবং এ খেদমতগুলোকে পরস্পর পরিপূরক মনে করা প্রত্যেক মুসলিম খাদেমে দ্বীনের কর্তব্য। 


যারা নিজেদের দ্বীনি খেদমতকেই শুধু মূল্যবান মনে করে এবং অন্যদের খেদমতের কদর করে না, তাদের দ্বারা উম্মাতের মধ্যে বিভেদ ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হবার আশংকা রয়েছে। 


‘ইকামাতে দ্বীন’ পুস্তকটিতে খেদমতে দ্বীন ও ইকামাতে দ্বীনে পার্থক্য আলোচনা করা হয়েছে। 


#এ_বইয়ের_মূল_আলোচ্য_বিষয়_২_টিঃ

১. ‘দ্বীন’ শব্দের ব্যাখ্যা,

২. “ইকামাতে দ্বীনের” মর্ম, 


#‘দ্বীন’_শব্দের_ব্যাখ্যাঃ

১. দ্বীন শব্দের অর্থ ৪ টি।

২. দ্বীনের ব্যাপকতা,

৩. রাসূলূল্লাহ (সঃ) এর জীবনই দ্বীন ইসলামের বাস্তব নমুনা 


#দ্বীন_শব্দের_অর্থ_৪_টিঃ

১. প্রথম অর্থ প্রতিদান বা বদলা,

যেমন- ﻣَﺎﻟِﻚِ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ (সূরা ফাতেহা) অর্থ: “প্রতিদান দিবসের মালিক।” 


২. দ্বিতীয় অর্থ আনুগত্য, যেমন- “আল্লার প্রতি আনুগত্যকে নিরংকুশ (খাস) করে তার দাসত্ব কর। ” -(সূরা আয যুমার: ২) 


৩. তৃতীয় অর্থ আনুগত্যের বিধান বা পদ্ধতি, যেমন- “নিশ্চয় আল্লার নিকট একমাত্র ইসলামই আনুগত্যের বিধান (জীবন বিধান)। ”-(সূরা আলে ইমরান: ১৯) 


৪. চতুর্থ অর্থ আইন, রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা, 

যেমন- “ফিরাউন বললো, আমাকে ছাড়, আমি মূসাকে হত্যা করবো। সে তার রবকে ডেকে দেখুক। আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের আইন ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা বদলিয়ে দেবে অথবা (অন্ততপক্ষে) দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি করবে। ”-(সূরা মুমিন: ২৬) 


#দ্বীনের_ব্যাপকতাঃ

আল্লার আনুগত্যের যে বিধান হিসেবে দ্বীন ইসলামকে পাঠানো হয়েছে তা মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগের জন্যই তৈরী করা হয়েছে। ব্যাক্তি, পরিবার, রাষ্ট্র, সমাজ ও আন্তর্জাতিক সব বিষয়ে যাতে মানুষ একমাত্র আল্লার সঠিক আনুগত্য করতে পারে সে উদ্দেশ্যেই আল্লাহ পাক স্বয়ং ইসলামী জীবন বিধান রচনা করেছেন। সব দেশ, সব কাল ও সব জাতির উপযোগী জীবন বিধান রচনার ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া আর কারো হতেই পারে না। 


#রাসূলূল্লাহ_সাঃ_এর_জীবনই_দ্বীন_ইসলামের_বাস্তব_নমুনাঃ

• “তোমাদের মধ্যে যারা আল্লার (সন্তুষ্টি) ও শেষ দিনের (মুক্তির) আকাংখা করে তাদের জন্য রাসূল (সঃ) এর মধ্যে সুন্দরতম আদর্শ রয়েছে। “-(সূরা আল আহযাব: ২১)

• দ্বীন ইসলাম কতটা ব্যাপক তা শেষ নবী (সঃ) এর বাস্তব জীবন থেকেই পরিষ্কার বুঝা যায়। তিনি আল্লার রাসূল হিসেবেই সব কাজ করতেন।

• রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর গোটা জীবনটাই ইসলামী জীবন এবং আল্লাহর দ্বীন বা আল্লাহর  আনুগত্যের মধ্যে শামিল।

• একদল “ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে” বিশ্বাসী আর অন্যদল “রাজনীতি নিরপেক্ষ ধর্মে” বিশ্বাসী। রাসূল (সঃ) এর আনীত দ্বীন-ইসলামের দৃষ্টিতে উভয় দলই ভুল পথে আছেন। 


#ইকামাতে_দ্বীনের_মর্মঃ

• ইকামাত শব্দের সহজ বোধ্য অর্থ হলো কায়েম করা, চালু করা, খাড়া করা, অস্তিত্বে আনা, প্রতিষ্ঠিত করা ইত্যাদি।

• “ইকামাতে দ্বীন” এমন একটি পরিভাষা যার অর্থ বাংলায় বিভিন্নভাবে প্রকাশ করা যায়। “আল্লার দ্বীন কায়েম করা” বা “দ্বীন ইসলাম কায়েম করা” বললে এর সহজ তরজমা হতে পারে।

• “তোমরা পূর্ণরূপে ইসলাম গ্রহণ কর এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। ”-(সূরা আল বাকারা: ২০৮) 


#বাংলাদেশে_দ্বীনে_হকের_অবস্থাঃ

• দ্বীনে হক বাংলাদেশে ততটুকুই বেঁচে আছে যতটুকু দ্বীনে বতিল অনুমতি দিয়েছে।

• ইসলম এ দেশে ঐ পরিমাণেই টিকে আছে যেটুকুতে বাতিল বাধা দেয় না।

• ইসলাম পূর্ণাংগ একমাত্র জীবন বিধান। ইসলামকে যদি বিরাট একটি দালানের সংগে তুলনা করা হয় তাহলে কালেমা, নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত সে বিরাট বিল্ডিং এর ভিত্তি মাত্র।

• বাংলাদেশে ইসলামের গোটাবিল্ডিং এর তো কোন অস্তিত্বই নেই। শুধু ভিত্তিটুকুর অবস্থাই করুণ। 


#দ্বীনে_হক_কায়েম_হলে_বাতিলের_অবস্থা_কী_হয়?

• যেখানে দ্বীনে বাতিল কায়েম আছে সেখানে যেমন দ্বীনে হক বাতিলের অধীনে হয়ে থাকতে বাধ্য হয়, তেমনি দ্বীনে হক কায়েম হলে বাতিলকেই হকের অধীন হতে হয়।

• আল্লাহ পাক বাতিলকে খতম করার হুকুম দেননি। তিনি হককে বিজয়ী করার নির্দেশ দিয়েছেন।

• দ্বীনে হক কায়েম হলে বাতিল ধর্ম খতম হয়ে যাবে না। যারা অন্য ধর্ম পালন করতে চায় তাদেরকে বাধা দেয়া যাবে না।

• মন্দির, গির্জা ইত্যাদির হেফাযত করতে হবে। কারণ ধর্মের উপর শক্তি প্রয়োগ কুরআনে নিষেধ। 


#ইকামাতে_দ্বীনের_দায়িত্বঃ 

• আল্লাহ পাক এ দায়িত্ব দিয়েই রাসূল (সঃ) কে পাঠিয়েছেন।“তিনিই সে সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও একমাত্র হক দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন যেন (সে দ্বীনকে) আর সব দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন।” (সূরা আত তাওবা: ৩৩, সূরা ফাতহ: ২৮, সূরা আস সফ: ৯)

• রাসূলের দায়িত্ব পালনে পূর্ণভাবে শরীক হওয়া ঈমানের অপরিহার্য দাবী। - ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব প্রত্যেক মুসলিমেরই।

• ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব (ফরিযায়ে ইকামাতে দ্বীন) প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। 


#রাসূল_সাঃ_কি_দায়িত্বের_অতিরিক্ত_কাজ_করেছেন?

• ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা, এ রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করা, এ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার গঠন করা, দেশের প্রচলিত আইনের বদলে কুরআনের আইন চালু করা, ইনসাফপূর্ণ বিচার-ব্যবস্থা কায়েম।

• আল্লার রাসূলই হচ্ছেন দ্বীন ইসলামের আদর্শ। এসব কাজ যদি তিনি দ্বীনের দায়িত্ব হিসেবে নিজেই করে থকেন তাহলে এগুলোর গুরুত্বকে অবহেলা করলে দ্বীনদারীর ক্ষতি হবে কি না?

• বিস্ময়ের বিষয় যে, দ্বীনদারীর দোহাই দিয়েই দ্বীনের এসব দায়িত্বকে অগ্রাহ্য করা হয়। 

• বাতিলকে পরাজিত করে দ্বীনে হককে বিজয়ী করার দ্বীনি দায়িত্বই যে আসল কাজ এবং সে কাজের যোগ্য হবার জন্যই যে, নামায, রোযা, যিকর ইত্যাদির দরকার, যদি দ্বীনদার লোকেরাই সে কথা না বুঝে তাহলে দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করার দায়িত্ব কারা পালন করবে?

• “ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব অমুক বড় আলেম পালন করেননি বলে আমিও পালন করা দরকার মনে করিনি”–এ খোঁড়া যুক্তি সেখানে কোন কাজে আসবে না। 


#ইসলামী_আন্দোলনের_চিরন্তন_কর্মপদ্ধতিঃ

দুনিয়ায় যে কোন আদর্শ কায়েমের এটাই একমাত্র স্বাভাবিক কর্মপদ্ধতি। এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ: 


#এক: আদর্শ কায়েমের জন্য একদল নেতা ও কর্মী বাহিনী তৈরী হওয়া প্রয়োজন। 


#দুই: যোগ্য নেতা ও কর্মী দল আসমান থেকে নাযিল হয় না। মানব সমাজ থেকেই এদেরকে সংগঠিত করে গড়ে তুলতে হয়। 


#তিন: ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সাথে কায়েমী স্বার্থের এ সংঘর্ষ প্রত্যেক নবীর জীবনেই দেখা গেছে। 


#চার: আন্দোলনের যোগ্য নেতৃত্ব ও কর্মী বাহিনী তৈরীর এ চিরন্তন পদ্ধতি অবশ্যই সময় সাপেক্ষ। 


#পাঁচ: ব্যক্তি গঠনের এ পর্যায় অতিক্রম করার পরই সমাজ গঠনের সুযোগ হতে পারে। 


#ছয়: ইসলামের খেদমত ও ইসলামী আন্দোলনে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। 


#সাত: ইসলামী আন্দোলন সঠিক কর্মপদ্ধতি ও কর্মসূচী নিয়ে দীর্ঘ সংগ্রাম যুগ অতিক্রম করা সত্ত্বেও এবং ইসলাম কায়েমের যোগ্য নেতৃত্ব ও কর্মীদল সৃষ্টি করতে সক্ষম হলেও শেষ পর্যন্ত বিজয় যুগ নাও আসতে পারে। 


#ইসলামী_আন্দোলন_ও_ক্যাডার_পদ্ধতিঃ

• যে কোন আদর্শ বাস্তবে কায়েম করতে হলে সে আদর্শে মন, মগয ও চরিত্র বিশিষ্টি নেতৃত্ব ও কর্মী বাহিনী তৈরী করতেই হবে।

• আদর্শ ভিত্তিক আন্দোলন উপযুক্ত নেতা ও কর্মীদল তৈরী করার জন্য কোন না কোন ক্যাডার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য।

• প্রথমে সমর্থক, ক্রমে কর্মী ও সদস্যের দায়িত্ব গ্রহণ করার একটা স্বভাবিক ক্রমিক পর্যায় প্রয়োজন। এ জাতীয় পদ্ধতিকেই ক্যাডার সিষ্টেম বলে। 


#হক_ও_বাতিলের_সংঘর্ষ_অনিবার্য_কেন?

• হক কায়েমের চেষ্টা করলে বাতিলের পক্ষ থেকে বাধা আসাই স্বাভাবিক। কারণ হক ও বাতিল একই সাথে চালু থাকতে পারে না। 

• ইসলামের প্রথম কথাই বাতিলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। এ কারণেই কালেমার দাওয়াত নিয়ে যে নবীই এসছেন তাগুত বা বাতিল তাকে স্বাভাবিকভাবেই দুশমন মনে করে নিয়েছে। 


#দ্বীনি_খেদমতের_সাথে_এ_সংঘর্ষ_হয়_না_কেন?

• -যে দেশে দ্বীনে হক কায়েম নেই সেখানে ইকামাতে দ্বীনের কাজ বা ইসলামী আন্দোলন চালালে কায়েমী স্বার্থ অবশ্যই বাধা দেবে।

• যদি কায়েমী স্বার্থ কোন ইসলামী খেদমতকে বিপজ্জনক মনে না করে তাহলে বুঝতে হবে যে, ঐ খেদমত যতই মূল্যবান হোক তা ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলন নয়।

• মাদরাসা, খানকা, তাবলীগ দুনিয়াময় দ্বীনের বুনিয়াদী শিক্ষাকে  পৌঁছানের মাধ্যমে খিদমাতে দ্বীনের মহান কাজ করে যাচ্ছেন।

• মাদ্রাসা,তাবলীগ,ও খানকাসহ অন্যান্য খেদমতে দ্বীনের সাথে বাতিল শক্তির সংঘর্ষ হয় না। কারণ, তাঁদের পদ্ধতির মধ্যে বাতিলের উৎখাতের কোন কর্মসূচি নেই।

• একমাত্র ইকামাতে দ্বীনের দাওয়াত ও প্রোগ্রামের সংগেই এ সংঘর্ষ বাধে। সব নবীর জীবনেই একথা সত্য বলে দেখিয়ে গিয়েছে। 


#ওলামায়ে_কেরাম_সবাই_“ইকামাতে_দ্বীনে”_সক্রিয়_নন-কেন?

- বাংলাদেশে কয়েক লক্ষ ওলামায়ে কেরাম আছেন। তারা বিভিন্ন প্রকার দ্বীনি খেদমতে নিযুক্ত রয়েছেন। 

- ইকামাতে দ্বীনের দাবী অনুযায়ী তারা ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয় না হওয়ার পেছনে কারণ ৫ টি। 


#একঃ যারা মাদ্রাসায় পড়তে আসে তারা প্রায় সবাই গরীবের সন্তান। ফলে উন্নত মানের আলেম কমই হচ্ছে। 


#দুইঃ মাদ্রাসা শিক্ষা দ্বারা দুনিয়ার উন্নতির আশা কম বলে ধনী লোকেরা মাদ্রাসায় ছেলেদেরকে পাঠাতে চায় না।  

#তিনঃ  যারা মাদ্রাসায় পড়তে বাধ্য হয় তারা শুধু আখেরাতের আশাই করে। 


#চারঃ মাদ্রাসা শিক্ষায় ইসলামকে একটি বিপ্লবী আন্দোলন হিসেবে শেখাবার ব্যবস্থা নেই। শুধু ধর্মীয় শিক্ষা হিসেবেই ইসলামকে শেখান হয়। 


#পাঁচঃ সম্ভবত সবচেয়ে বড় কারন রাসূল (সঃ)-কে স্রেষ্টতম আদর্শ মানা সম্পর্কে সঠিক ধরনার অভাব। 


#দ্বীনের_মাপকাঠি_একমাত্র_রাসূল_সাঃ

• আল্লাহ পাক একমাত্র রাসূল (সঃ)-কে উসওয়াতুন হাসানা বা দ্বীনের মাপকাঠি বানিয়েছেন।

• রাসূল (সঃ)-কে মানার উদ্দেশ্যেই আমরা সাহাবায়ে কেরামকে মানি।

• ওহী দ্বারা পরিচালিত হওয়ার দরুন রাসূল যেমন নির্ভূল তেমন আরকেউ হতে পারে না। এজন্যই রাসূলকে যেমন অন্ধভাবে মানতে হয় তেমন আর কাউকে মানা চলে না। 


#উপমহাদেশের_বড়_বড়_ওলামা_ইকামাতে_দ্বীনের_আন্দোলন_করেননি_কেন?

• বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে আলেমগনের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য।

• ১৮৩১ সালে বালাকোটে পরাজয়ের পর থেকে ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনের  তখনকার রাজনৈতিক পরিবেশে ওলামায়ে হিন্দের নিকট ইংরেজ থেকে আজাদী হাসিলই প্রধান উদ্দেশ্য ছিল।

• আর মুসলিমলীগ পন্থি ওলামাদের নিকট দেশ ভাগ করে স্বাধীন মুসলীম দেশ কায়েমই আসল লক্ষ্য ছিল।

• এ দুটো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নিজের নেতৃত্ব দেয়ার মতো পজিশন তাদের ছিল না। 

• ইকামাতে দ্বীনের দাওয়াত ও কর্মসূচী নিয়ে এ দেশকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিনত করার আন্দোলন করাই যে দ্বীনের দাবী তা উপলব্ধির অভাব। 


#জামায়াতবদ্ধ_প্রচেষ্টার_গুরুত্বঃ 

• ইকামাতে দ্বীনের কাজ কারো পক্ষে একা করা কিছুতেই সম্ভব নয়।

• এমন কি শত যোগ্যতা সত্বেও কোন নবীও একা দ্বীনকে বিজয়ী করতে পারেন নি। অবশ্য প্রথমে নবীকে একা শুরু করতে হয়েছে।

• সফরের সময় দু’জন এক সাথে সফর করলেও একজনকে আমীর মেনে জামায়াতের শৃঙ্খলা মতো চলার জন্য রসূল (সঃ) নির্দেশ দিয়েছেন।

• জমায়াত ছাড়া ইসলামী জিন্দেগী সম্ভব নয় এবং আমীর ছাড়া ও জাময়াত হতে পারে না। 


#ইকামাতে_দ্বীনের_উদ্দেশ্যে_গঠিত_জামায়াতের_বৈশিষ্ট্যঃ

- প্রত্যেক সংগঠন,জামায়াত বা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। স্বাভাবিকভাবে ঐ উদ্দেশ্যেই সেখানে লোক তৈরী করার পরিকল্পনা থাকে।

- ইকামাতে দ্বীনের জন্য গঠিত জামায়াতের কয়েকটি বৈশিষ্ট রয়েছেঃ 


#একঃ ইসলাম যতটা ব্যাপক এ জামায়াতের দাওয়াত ততটা ব্যাপক হবে। 

#দুইঃ এ জামায়াত ইসলামের পূর্নাংগ শিক্ষাকে মানব সমাজের নিকট তুলে ধরার চেষ্টা করবে। 

#তিনঃ পূর্ন দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে মানুষকে এ সংগঠনে শামিল করার চেষ্টা করবে। 

#চারঃ যত প্রকার তারবিয়াত বা ট্রেনং সম্ভব তার মাধ্যমে যোগ্য কর্মী বাহিনী সৃষ্টি করবে।

#পাঁচঃ বাতিল নেজাম বা দ্বীনে বাতিল এ জাতীয় জামায়াতকে তাদের জন্য বিপদ জনক মনে করে তার অগ্রগতি রোধ করার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবে। 

#ছয়ঃ বাতিল শক্তি ও কায়েমী স্বার্থের এ বিরোধিতা ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী হয়। 

#সাতঃ এ জাতীয় সংগঠনের কেউ নেতা হবার চেষ্টা করে না। এবং নেতার যোগ্যতা সম্পন্ন লোককে নেতৃত্ব গ্রহন করার জন্য অনুরোধ করা হয়। 

#আটঃ ইকামাতে দ্বীনের উদ্দেশ্যে গঠিত জামায়াতের নিকট ইসলামী আদর্শই আসল আকর্ষন। মানুষকে এ আদর্শের দিকে আকৃষ্ট করাই এর বৈশিষ্ট্য। 


#বাংলাদেশে_এ_জাতীয়_জামায়াত_আছে_কি?

• পূর্নাঙ্গ জামায়াত না পাওয়ার  অজুহাতে ইকামাতে দ্বীনের কাজ না করলে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে।

• আল্লাহপাক আমাকে যতটুকু জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিবেক দিয়েছেন তাতে ইকামাতের উদ্দেশ্যে জামায়াতে ইসলামীর চেয়ে উন্নত কোন জামায়াত আমি পাইনি।

• আল্লাহর দ্বীনকে এ দেশে কায়েম করার জন্য যদি জামায়াতে ইসলমীর চেয়ে আরও উন্নত কোন সংগঠন আমি পাই এ জামায়াত ছেড়ে ঐ সংগঠনে যোগ দান করা ফরয মনে করবো। 


#জামায়াতে_ইসলামী_ও_মাওলানা_মওদুদী_(রঃ)_বর্তমান_জামায়াতে_ইসলামীর_সাথে_মরহুমের_সম্পর্কঃ 


#একঃ

মাওলানা সাইয়েদ আবুল আল মওদুদী (রঃ) আজীবন একথার উপর জোর দিয়েছেন যে, আল্লার রাসূল (সঃ) ছাড়া আর কোন ব্যক্তিকে অন্ধভাবে মানা উচিত নয়। 


#দুইঃ

এ জামায়াতে আহালে সুন্নাহ আল জামায়াতের যে কোন মাযহাবের লোক শামিল হতে পারে। 


#তিনঃ

জামায়াতের সবারই ইসলাম সম্পর্কে অতীত ও বর্তমান সকল লেখকের বই থেকে স্বাধীন ভাবে মতামত গ্রহন করার পূর্ন স্বাধীনতা রয়েছে। মওলানা মওদুদী (রঃ) চিন্তার স্বাধীনতার উপর এত গুরুত্ব দিয়েছেন বলেই তাকে অন্ধভাবে অনুসরনের কোন আশংকা নেই। 


#চারঃ

জামায়াতে ইসলামী মওলানা মওদূদী (রঃ)-কে ফেকাহ বা আকায়েদের ইমাম মনে করে না। 


#পাঁচঃ

আরব দুনিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশের বড় বড় ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরাম মাওলানা মওদূদী (রঃ)-কে এ যুগের শ্রেষ্টতম ইসলামী চিন্তাবিদ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। 


#জামায়াত_বিরোধী_ফতোয়াঃ

• জাময়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে যারা ফতোয়া দেন ও প্রচার করেন জামায়াত তাদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে সময় নষ্ট করে না।

• জামায়াত তাদের দ্বীনি খেদমতকে স্বীকার করে এবং তাদের বিরুদ্ধে কোন বিদ্বেষ পোষণ করে না।

• দেশে দ্বীনে হক ও দ্বীনে বাতিলের যে সংঘর্ষ চলছে তাতে অবশ্য ঐসব ফতোয়া বাতিলের পক্ষে লাগাচ্ছে।

• তবুও জামায়াত তাদেরকে বিরোধী শক্তি বলে মনে করে না। তাদের সাথে জামায়াতের কোন লড়াই নেই।

• জামায়াতে ইসলামীকে সংশোধন করার নিয়তে আলেমগণ যে কোন ধরনের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিলে জামায়াত তাদের এ মহান খেদমতের জন্য শুকরিয়া জানাবে। 


#মাওলানা_মওদূদী_(রঃ)_বিরোধী_ফতোয়াঃ

• মাওলানা মওদূদী (রঃ) ছোট বড় শতাধিক বই লিখেছেন।

• যিনি এতকিছু লিখেছেন তার লেখায় কোন ভুল ত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক নয়। - কিছু সংখ্যক ব্যক্তি তার বিভিন্ন লেখা থেকে উদ্বৃতি নিয়ে বিকৃত ব্যাখ্যা করেছেন, লেখকের মূল বক্তব্যের সাথে সমালোচনার কোন মিল নেই।

• যারা জ্ঞান চর্চায় নিযুক্ত তারা যুক্তি-প্রমাণের ভিত্তিতে তার লেখার সমালোচনা করলে দ্বীনের অবশ্যই উপকার ও খেদমত হবে।

• দুনিয়ার বড় বড় ওলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মওদূদী (রঃ)-কে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ট আলেম ও ইসলামের মহান বিশেষজ্ঞ বলে স্বীকার করেন। 


#ওলামা_ও_মাশায়েখে_কেরামের_খেদমতেঃ

• ওলামায়ে কেরামে ও মাশায়েখে এযাম হলেন নবীর ওয়ারিস।

• অগণিত আধুনিক শিক্ষিত লোকের পক্ষে ইসলামের ইলম ও আমল সম্বন্ধে শিক্ষা পেতে হলে ওলামা ও মাশায়েখের সাহায্য ছড়া উপায় নেই।

• সকল হাক্কানী ওলামা ও মাশায়েখের খেদমতে আরজ মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর  “তাফহীমুল কুরআন” “রাসায়েল ও মাসায়েল” নামক পুস্তকগুলো পড়ে দেখুন।

• শুধু অন্যের মন্তব্য শুনেই সিদ্ধান্ত না নিয়ে নিজে দেখে ফয়সালা করুন।


সম্পূর্ণ বইটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

বইটি অডিও শুনতে এখানে ক্লিক করুন।


No comments

Powered by Blogger.