দারসুল কোরআন//সূরা: আত তাওবা(আয়াত:১১১-১১২)

 

আরবী ইবারতঃ

إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (111)

التَّائِبُونَ الْعَابِدُونَ الْحَامِدُونَ السَّائِحُونَ الرَّاكِعُونَ السَّاجِدُونَ الْآمِرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّاهُونَ عَنِ الْمُنكَرِ وَالْحَافِظُونَ لِحُدُودِ اللَّهِ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ (112)


সরল বাংলা অনুবাদঃ

          (১১১) প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে । তাদের প্রতি তাওরাত, ইন্জিল ও কুরআনে (জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ। আর আল্লাহর চাইতে বেশী ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে ? কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা বেছা করছো সে জন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।

           (১১২) আল্লাহর দিকে বার বার প্রত্যাগমনকারী, তার ইবাদত কারী,তার প্রশংসা বাণী উচ্চারণ কারী, তার সামনে রুকুকারী ও সেজদাকারী, সৎ কাজের আদেশ কারী, অসৎ কাজ থেকে বিরতকারী এবং আল্লাহর সীমা সংরক্ষনকারী (সেই সব মুমিন হয়ে থাকে যারা আল্লাহর সাথে কেনা বেচার সওদা করে)। আর হে নবী! এ মুমিনদেরকে সুখবর দাও!

সুরা পরিচিতিঃ-

আরবিسورة التوبة‎‎ যা সুরা বারাআত নামেও পরিচিতএটি পবিত্র কুরআনের নবম সূরা। এই সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১২৯ টি।


সূরা আত তাওবার নামকরনঃ

এ সূরাটির দু’টি নামে পরিচিত: -আত তাওবাহ ও -আল বারাআতু। 

 আরবি তওবা অর্থ ক্ষমা। একে সূরা তওবা বলা হয়, কারণ এতে মুসলমানদের তওবা কবুল হওয়ার বর্ণনা রয়েছে। সূরাটির অন্য নাম হলো বারা'আত - একে বারা'আত বলা হয় কারণ, এতে কাফেরদের তথা অবিশ্বাসীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ও তাদের ব্যাপারে দায়িত্ব-মুক্তির উল্লেখ আছে।

তাওবা নাম করনের কারণ-এ সূরার ১১৮ নং আয়াতে কতিপয় ঈমানদারের গোনাহ মাফ করে তাওবা কবুল করার কথা বলা হয়েছে।এই সূরার ১১৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنْفُسُهُمْ وَظَنُّوا أَنْ لَا مَلْجَأَ مِنَ اللَّهِ إِلَّا إِلَيْهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوبُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

আর (তিনি অনুগ্রহ করলেন) ঐ তিনজনের প্রতিও যারা (তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে) পিছনে থেকে গিয়েছিল [কা‘ব ইবনে মালিক, মুরারা ইবনে রাবী‘আ ও হিলাল ইবনে উমাইয়্যা (রাযি।)] তাঁরা অনুশোচনার আগুনে এমনি দগ্ধীভূত হয়েছিলেন যে] শেষ পর্যন্ত পৃথিবী তার পূর্ণ বিস্তৃতি নিয়েও তাদের প্রতি সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল আর তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠল আর তারা বুঝতে পারল যে, আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন আশ্রয়স্থল নেই তাঁর পথে ফিরে যাওয়া ব্যতীত। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করলেন যাতে তারা অনুশোচনায় তাঁর দিকে ফিরে আসে। আল্লাহ অতিশয় তাওবাহ কবূলকারী, বড়ই দয়ালু।

বারাআতু নামকরণের কারণ- আর এর শুরুতে মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা ঘোষনা করা হয়েছে বলে একে বারায়াত (অর্থাৎ সম্পর্কচ্ছেদ) নামে অভিহিত করা হয়েছে।

بَرَآءَۃٌ مِّنَ اللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖۤ اِلَی الَّذِیۡنَ عٰہَدۡتُّمۡ مِّنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ


সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ না লেখার কারণঃ

০১. এটা যখন সংকলন করা হয় তখন সাহাবীদের মধ্যে মতা নৈক্য দেখা দেয়- কেউ কেউ বলেন এই সূরা আনফালের অংশ আবার কেউ কেউ বলেন- আলাদা সূরা।
০২. বিসমিল্লাহ্ হলো রহমত কামনা ও নিরাপত্তার জন্য, আর এ সূরার মধ্যে কাফের মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা হয়েছে, তাই বিসমিল্লাহ্ লেখা হয়নি।
০৩.ইমাম কায়েশী বলেন- জিব্রাঈল(আ.) এই সূরা নাযিলের সময় বিসমিল্লাহ নিয়ে আসেন নাই তাই।
০৪. ইমাম রাযী বলেন- নবী করিম (স:) নিজেই এর শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখেন নি, কাজেই সাহাবা কেরাম ও লেখেন নি এবং পরবর্তী লোকেরা ও এ রীতি অনুসরণ অব্যাহত রেখেছেন। পবিত্র কুরআন যে নবী (স:) থেকে হুবুহু ও সামান্যতম পরিবর্তন-পরিবর্ধন ছাড়াই গ্রহন করা হয়েছিল এবং যে ভাবে তিনি দিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই তাকে সংরক্ষন করার জন্য যে সর্বোচ্ছ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে এটি তার একটি প্রমাণ।


সূরা আত্ তাওবা নাযিলের সময়কালঃ 

এ সূরা ৩টি ভাষনে নাযিল হয়।-
প্রথম ভাষণ: ১ম রুকু হতে ৫ম রুকু পযর্ন্ত, এ অংশ ৯ম হিজরীর যিলক্বদ মাসে নাযিল হয়।
২য় ভাষণ: ৬ষ্ঠ রুকু থেকে ৯ম রুকু পযর্ন্ত , ৯ম হিজরীর রজব মাসে নাযিল হয়।
তৃতীয় ভাষণ:১০ম রুকু থেকে সূরার শেষ পযর্ন্ত তাবুক যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তন কালে অবতীর্ণ হয়।

সূরা আত তাওবার বিষয় বস্তুঃ

১.    বিধর্মীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে (১ম রুকু)।
২.    তাবুক যুদ্ধের অভিযান (৬ষ্ঠ-১০ম রুকু)।
৩.    মুনাফিকদের পরিণাম ও পরলৌকিক শাস্তি।(৪২-৪৩,৪৭-৫৯,৬১-৬৮,৭৪-৯০,৯৩-৯৮,১০১,১০৭-১১০,১২৪ ও ১২৭ আয়াত)
৪.    মসজিদে জেরার নির্মাণের পরিণাম ও উহা ধ্বংস করার নির্দেশ ( ১০৮ নং আয়াত)।
৫.    শহীদের মর্যাদা, মাহাত্ম সৎপথে অর্থ ব্যয় এর পরিণাম (১৪তম রুকু)।

আলোচ্য আয়াতগুলোর শানে নুযুলঃ

অধিকাংশ মুফাস্সিরের মতে এ আয়াতগুলো নাযিল হয়েছে  ‘বায়আতে আকাবায়’ অংশগ্রহনকারী লোকদের ব্যাপারে।এ বায়’আত নেয়া হয়েছিল মক্কায় মদীনার আনসারদের থেকে। তাই এই সূরাটি মাদানী হওয়া সত্ত্বে ও এ আয়াতগুলোকে মাক্কী বলা হয়েছে।

আকাবা: “এখানে আকাবা বলতে বোঝায় মিনার জমরায়ে আকাবার সাথে মিলিত পর্বতাংশকে”। এখানে মদীনা থেকে আগত আনসারগণের তিন দফায় বায়আত নেয়া হয়। 

১.    ১ম দফা নেয়া হয় নবুয়তের একাদশ বছরে, তখন মোট ৬ জন লোক ইসলাম গ্রহন করে মদীনায় ফিরে যায়। এত মদীনার ঘরে ঘরে ইসলাম ও নবী করীম (স.) -এর চর্চা শুরু হয়। 

২.    ২য় দফায় পরবর্তী বছর হজ্জ্বের মৌসুমে পূর্বের ৬ জন সহ মোট ১২ জন নবী করিম (স.) এর হাতে বায়আত গ্রহন করে।  আর এভাবে মদীনায় মুসলমানের সংখ্যা বাড়তে থাকে (৪০ জনের ও বেশী)। ফলে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নবী করিম (স.) হযরত মোসআব বিন উমাইর (রা:) কে কোরআন তালিমের জন্য প্রেরণ করেন।

৩.    ৩য় দফায় নবুয়তের ত্রয়োদশ বছর ৭০ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা সহ ৩য় ও সর্বশেষ বায়আত এ আকাবায় অনুষ্ঠিত হয়। ‘সাধারণত একেই বায়’আতে আকাবা বলা হয়।


আয়াতের তাফসীরঃ

১১১ নং আয়াত-

إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (111)

১.    ১১১ নং আয়াতটি-ই জিহাদ সংক্রান্ত ১ম আয়াত। কারন মুহাম্মদ (স.) মক্কায় অবস্থান কালে এ পযর্ন্ত জিহাদ সংক্রান্ত কোন হুকুম নাযিল হয়নি।

২. জিহাদ অর্থ :- جهاد শব্দটি বাবে مفاعلة থেকে جاهد يجاهد অর্থ হলো- কষ্ট সহ্য করা।
বাবে فتح থেকে শব্দটির অর্থ হলো- পূর্ণরূপে চেষ্টা করা।
৩.    জিহাদের সংজ্ঞা:-
আল্লামা আইনী (রাহিঃ) বলেন, بذل الجهد في قتال الكفار لاعلاء كلمة الله অর্থাৎ আল্লাহর দীনকে সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে কাফেরদের সাথে সংগ্রাম করার জন্য শ্রম ব্যয় করা।
আল্লামা কাস্তালানী রাহিঃ বলেন, ইসলামের সাহায্য করা ও আল্লাহর কালেমাকে সমুন্নত করার জন্য কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করাকে জিহাদ বলে।
৪.    জিহাদের স্তর : ৫ টি- 
১.    দাওয়াত ইলাল্লাহ।
২.    শাহাদাৎ আলান নাস।
৩.    কিতাল ফি-সাবিলিল্লাহ।
৪.    আমল বিল মা’রুফ নাহি আনিল মুনকার।
৫.    ইক্বামতে দ্বীন।
         যেমন- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-﴿تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِبِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْتَعْلَمُونَ﴾
“তোমরা আল্লাহ ও রাসুল (স.) এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবন বাজি রেখে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের  জন্য উত্তম; যদি তোমরা বুঝতে পার”। (আস্ সফ-১১) 
রাসুল (সঃ) বলেছেন, الجهاد ماض الي يوم القيامة অর্থাৎ কেয়ামত পর্যন্ত এমন একটি দল থাকা আবশ্যক, যারা জিহাদের দায়িত্ব পালন করবে। 

জিহাদের সফলতা: 

১.    আখেরাতের সফলতা: আল্লাহ বলেন-﴿فَلْيُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يَشْرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَابِالْآخِرَةِ ۚ وَمَن يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْفَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا﴾

“(এ সব লোকদের জেনে রাখা উচিত যে) আল্লাহর পথে লড়াই করা সে সব লোকদেরই কর্তব্য, যারা পরকালের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিক্রি করে দেয়। যারা আল্লাহর পথে লড়াই করবে ও নিহত হবে কিংবা বিজয়ী হবে, অচিরেই তাকে আমি  বিরাট পুরষ্কার দান করব”।(সূরানিসা: ৭৪)

২.    ﴿يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَاالْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُالْعَظِيمُ﴾

“আল্লাহ তোমাদেও সব গুণাহ মাফ কওে দিবেন এবং তোমাদের এমন বাগানে প্রবেশ করাবেন যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাদ্বারা বহে চলবে।আর চির স্থায়ী বসবাসের জায়গা জান্নাতের মধ্যে তোমাদেরকে সর্বোত্তম ঘর দান করবেন। এটাই বড় সফলতা”। ( আছ্ ছফ-১২)

৩.    তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করা হবে যার নেয়ামত সমূহ অশেষ ও চিরন্তন। (আছ্ ছফ:১২-১৩)

শহীদের মর্যাদা: 

১.    প্রথম রক্তপাতেই তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
২.    জান্নাতে তার স্থান তাকে দেখানো হবে (কবরে)।
৩.    কবরের আযাব থেকে তাকে রক্ষা করা হবে।
৪.    ‘কবরে’ বড় বিপদ আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।
৫.    হাশরের ময়দানে তার মাথায় একটা আকর্ষনীয় মূকুট পড়ানো হবে।
৬.    তাকে তার ৭০ জন আত্মীয়ের শাফায়াতের অনুমতি দেয়া হবে।

বাইয়াত: আভিধানিক অর্থ- ক্রয়- বিক্রয়, লেন-দেন, চুক্তি, আনুগত্যের শপথ, অঙ্গীকার, নেতৃত্ব মেনে নেয়া।

পরিভাষায়- “আল্লাহর সন্তুষ্টি অজর্নের লক্ষ্যে নিজের জান ও মালকে ইসলামী সংগঠনের দায়িত্বশীলের নিকট আনুগত্যের শপথের মাধ্যমে আল্লাহর পথে সপে দেয়ার ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতির নাম বাইয়াত”।

( ফাতহ-১০, ১৮)

إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِفَوْقَ أَيْدِيهِمْ ۚ فَمَن نَّكَثَ فَإِنَّمَا يَنكُثُ عَلَىٰ نَفْسِهِ ۖ وَمَنْأَوْفَىٰ بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا(১০) 

لَّقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَالشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْوَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا(১৮)

বাইয়াতের ব্যাপক অর্থ- 

১.     আল্লাহর সাথে জান মালেন চুক্তি। -আত্ তাওবা:১১

২.    আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশে শপথ। - 

সকল ধরনের হারাম বা নিষেধকৃত কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখার চুক্তি। - মুমতাহিন: ১২﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُيُبَايِعْنَكَ عَلَىٰ أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍيَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِيمَعْرُوفٍ ۙ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌرَّحِيمٌ﴾

১২) হে নবী, ঈমানদার নারীগণ যখন তোমার কাছে বাইয়াত গ্রহণরে জন্য আসে এবং এ র্মমে প্রতশ্রিুতি দয়ে য,ে তারা আল্লাহর সাথে কোন কছিুকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, যনিা করবে না, নজিদেরে সন্তানদরে হত্যা করবে না৷ সন্তান সর্ম্পকে কোন অপবাদ তরৈী করে আনবে না৷ এবং কোন ভাল কাজে তোমার অবাধ্য হবে না৷ তাহলে তাদরে থকেে বাইয়াত গ্রহণ করো এবং তাদরে মাগফরিাতরে জন্য দোয়া করো৷ নশ্চিয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মহেরেবান৷  

বাইয়াতের গুরুত্ব:
১.    নফ্স বা প্রবৃত্তি।
২.    ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি।
৩.    ইবলিশ।

 রাসূল (স.) বলেছেন- “যে ব্যক্তি বাইয়াত ছাড়া মারা যাবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু। (মুসলিম)

বাইয়াতের ফজিলত:

১.    আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা বাস্তবায়ন এবং দুনিয়ার জীবনের চেয়ে পরকালের জীবনকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য। (আন্ নিসা-৭৪)
২.    আল্লাহর মাগফিরাত। ( আল ইমরান- ১৩৩, হাদীদ-১১৬)
৩.    সর্বোচ্চ ঈমানের অধিকারী হওয়া। (আল ইমরান-১০২)
৪.    পরকালীন নিশ্চিত সফলতার গ্যারান্টি। (আলা- ১৪, শামস্-৯)
৫.    জাহান্নামের আগুন থেকে বাচার জন্য। ( আস্ সফ-৯, শামস্-৯)

বাইয়াত কার নিকট করতে হবে: 

১.    আল্লাহর নিককট।
২.    রাসূল (স.) এর নিকট।
৩.    রাসূলের (স.) এর অবর্তমানে ইসলামী সংগঠনের নিকট।

বাইয়াতের অবস্থা: 

১.    ৬ষ্ঠ হিজরীতে হুদায়বিয়া নামক স্থানে সাহাবীরা রাসূল (স.) এর হাতে বাবলা গাছের নীচে  হযরত ওসমান (রা:) হত্যার সংবাদে যে বাইয়াত গ্রহন করেন, তাকে বাইয়াতুল রিদওয়ান বলে।

২.    রাসূল (স.) এর ইন্তেকালের পরে খোলাফায়ে রাশেদীনের হাতে মুসলিম মিল্লাতের বাইয়াত গ্রহন মুসলিম জাতির জন্য বাস্তব দৃষ্টান্ত।

বাইয়াত পরিহার করার পরিণাম: 

১.    পরকালে পীড়াদায়ক শাস্তি। (বনী ইসরাঈল-৩৪, আন্ নাহল-৯১)

২.    জাহেলিয়াতের মৃত্যু।

৩.    কিয়ামতের  ময়দানে অপমান জনক চিহ্ন দ্বারা চিহ্নিত করবেন।


সূরা আত্ তাওবার ১১১ নং আয়াতে মৌলিকভাবে তিনটি কথা উল্লেখ যোগ্য। সেগুলো হল-
প্রথমত: আল্লাহর সাথে মুমিনদের ক্রয়-ব্ক্রিয়ের চুক্তি।
দ্বিতীয়ত: চুক্তি সম্পাদক করা মুমিনদের কাজ। আর সেটা হচ্ছে- জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ। যার ধরন হলো মরবে ও মারবে। (সূরা তাওবা-৪১, আন নিসা-৭১ নং আয়াত)
তৃতীয়ত:  মুমিনগণ আল্লাহর সাথে যে বাইয়াত বা চুক্তি সম্পাদন করেছে তাদের জন্য সুসংবাদ এজন্যই যে, আল্লাহর এ জান্নাতের ওয়াদা সঠিক এবং যুক্তিযুক্ত। আর আল্লাহর চাইতে অধিক প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী কেউ নেই।

১১২ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-

 ১১২ নং আয়াতে বাইয়াত গ্রহনকারী মুমিনদের ৮ টি গুনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে ১ম  সাতটি গুণের সংক্ষিপ্ত সার হলো ৮ম গুণ।

১.    আত্ তা‘য়িবুনা - তাওবাকারীগণ। অর্থাৎ যারা অপরাধ করার পর অনুতপ্ত হয়ে কৃত অপরাদের ক্ষমা চেয়ে তা আর না করার  ওয়াদা করে। (সূরা আল ইমরান- ৯০,১৩৫; নিসা- ১৭,১১০; আন আম- ৫৪; আরাফ-১৫৩;মুমিন-৩; আস্শুরা- ২৫; নাহল-১১৯;)

২.    আল আবিদুনা - ইবাদতকারীগণ। 

৩.    আল হামিদুনা - প্রশংসাকারীগণ, শুকরিয়াকারীগণ। অর্থাৎ যারা বিপদে-মুসিবতে, সুখে-দুখে, সবসময় আল্লাহর পশংসা করে। সূরা নসর-৩

৪.    আছ্ ছা‘য়িহুনা - পরিভ্রমণকারীগণ। কারো কারো মতে রোজা পালনকারীগণ। এখানে ইসলামের জন্য, জিহাদের জন্য ও হালাল রুজির জন্য ভ্রমন ও হতে পারে। ইসলাম পূর্ব যুগে খ্রীস্ট ধর্মে দেশ ভ্রমণকে ইবাদত মনে করা হতো। ইসলাম ধর্মে একে বৈরাগ্যবাদ বলে অভিহিত করে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে এবং এর পরিবর্তে রোযা পালনকে এর স্থলাভিসিক্ত করা হয়েছে। কারন দেশ ভ্রমনের উদ্দেশ্য সংসার ত্যাগ। অথচ রোযা এমন এক এবাদত, যা পালন করতে গিয়ে যাবতীয় পার্থিব বাসনা ত্যাগ করতে হয় এর ভিত্তিতে কতিপয় বণর্নাকরী জিহাদকে ও দেশ ভ্রমনের অনুরুপ বলা হয়। রাসূল (স.) বলেছেন- আমার উম্মতের দেশ ভ্রমণ হলো জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ। (ইবনে মাজা ও বায়হাকী) 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, কুরআন মাজীদে ব্যবহ্নত ‘সা‘য়িহুন’ অর্থ রোযাদার। 

হযরত ইকরামা (রা:) এ শব্দের ব্যাখ্যায় বলেন যে, এরা হলো দ্বীনের শিক্ষার্থী, যারা এলম হাসিলের জন্য ঘর-বাড়ী ছেড়ে বের পয়ে পড়ে।

৫.    আররা‘কিয়ূনাস সাজিদুনা - রুকুকারী ও সিজদাকারীগণ। অর্থাৎ যারা নামাজ কায়েম করে। যেমন-সূরা হজ্জ: ৭৭,লোকমান: ১৭,আনকাবুত-৪৫

৬.    আল আ‘মীরুনা বিল মা‘রুফ - সৎ কাজের আদেশ দানকারী এবং ভালো কাজের নির্দেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ কারী। 

৭.    আন্ নাহু না আনীল মুনকার -  মন্দ ও খারাপ কাজের বাধাদান কারী।  

৮.    আল হাফিজুনা লি-হুদুদিল্লাহ -  আল্লাহর সীমা হিফাজত কারী, সংরক্ষনকারীগণ, আল্লাহর নিষেধ যথাযথভাবে পালনকারীগণ।

تِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِ فَلَا تَعۡتَدُوهَاۚ وَمَن یَتَعَدَّ حُدُودَ ٱللَّهِ فَأُو۟لَـٰۤىِٕكَ هُمُ ٱلظَّـٰلِمُونَ﴾ [البقرة ٢٢٩]

تِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِۚ وَمَن یُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ یُدۡخِلۡهُ جَنَّـٰتࣲ تَجۡرِی مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَـٰرُ خَـٰلِدِینَ فِیهَاۚ وَذَ ٰ⁠لِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِیمُ [النساء ١٣]

وَمَن یَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَیَتَعَدَّ حُدُودَهُۥ یُدۡخِلۡهُ نَارًا خَـٰلِدࣰا فِیهَا وَلَهُۥ عَذَابࣱ مُّهِینࣱ [النساء ١٤]

---- প্রথম সাতটি গুণের মধ্যে যে তফসিল রয়েছে , তার সংক্ষিপ্ত সার কথা হলো এ যে - এরা নিজেদের প্রতিটি কর্ম ও কথায় আল্লাহর নির্ধারিত তথা শরীয়তর হুকুমের অনুগত ও হেফাজতকারী। 

শিক্ষনীয় দিকঃ 

১.    আল্লাহর তায়ালা মুমিনদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন।
২.    আল্লাহর পথে জিহাদ করতে হবে, মরলে শহীদ বাচলে গাজী।
৩.    জিহাদের বিনিময়ে জান্নাত এটা আল্লাহর পাকাপোক্ত ওয়াদা।
৪.    আল্লাহর পথে জিহাদ করলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গায় সফলতা লাভ করা যায়।
৫.    মুমিনদের জীবনের একমাত্র কামনা হওয়া উচিত আল্লাহর পথে জিহাদ।
৬.    মুমিনের যে গুণগুলোর কথা বলা হয়েছে এগুলো পুরোপুরি নিজের জীবনে  বাস্তবায়ন করা।

No comments

Powered by Blogger.