বইনোট // চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান // লেখক- নঈম সিদ্দিকী

চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান

লেখক- নাঈম সিদ্দিকী



আধুনিক যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তানায়ক, সমাজ সংস্কারক সপ্রসিদ্ধ আলেমে দ্বীন মুহতারাম নঈম সিদ্দিকী “চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান” বইটি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের চরিত্রকে সুদৃঢ় করার জন্য রচনা করেছেন।
★চরিত্রের সংজ্ঞাঃ মানুষের ব্যক্তিগত ও সমাজগত জীবনের বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীন কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, চিন্তাচেতনা, ওঠা-বসা, আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি, প্রতিটি ক্ষেত্রে পুতঃ পবিত্র ভাবকে চরিত্র বলে।
★চরিত্র সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকেঃ
১. ইসলামী বা সৎ চরিত্র
২. অনৈসলামী বা অসৎ চরিত্র

★ ভূমিকাঃ-

ভূমিকায় ৩টি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যথাঃ--
১. ঈমান ও চরিত্র ধ্বংসকারী তৎপরতা। যেমনঃ-- শয়তানের হামলা, পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী হামলা, ও নাস্তিক্যবাদী হামলা।
২. স্বার্থপরতাঃ-- সংক্রামক ব্যাধি হতে দেখে দূরে অবস্থান যেমন স্বার্থপরতা, তেমনি ঈমান নিয়ে মসজিদের কোনে আশ্রয় নেয়াও স্বার্থপরতার সামিল।
৩. ঈমানের পুঁজিঃ বাজারে আবর্তনের মধ্যে পুঁজির স্বার্থকতা। সিন্দুকে পড়ে থাকা পুঁজি যেমন কোন মুনাফা বয়ে আনতে পারে না, তেমনি চরিত্র রুপ পুঁজি সমাজে প্রতিফলিত না হলে তার স্বার্থকতা থাকেনা।
শয়তানের হামলা ৩ প্রকার। যথাঃ-
১। শয়তান মানুষের রূপ ধরে আসে,

ٱلَّذِى يُوَسْوِسُ فِى صُدُورِ ٱلنَّاسِ, () مِنَ ٱلْجِنَّةِ وَٱلنَّاسِ ()

২। শয়তান মানুষের চতুর্দিক থেকে হামলা করে।

ثُمَّ لَأَتِيَنَّهُم مِّنۢ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَـٰنِهِمْ وَعَن شَمَآئِلِهِمْ‌ۖ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَـٰكِرِينَ, (আরাফ-১৭)

৩। শয়তান মানুষের রক্ত কণিকায় প্রবেশ করে।

★ পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী হামলা ২ প্রকার। যথাঃ-
১। পুঁজিবাদ ও
২। জাতীয়তাবাদ।
★ নাস্তিক্যবাদের হামলা ৩ প্রকার। যথাঃ-
১। সমাজতন্ত্র বা কমিউনিজম,
২। স্রষ্টার অস্তিত্বে অস্বীকৃতি ও
৩। ব্যক্তিজীবনে ইসলামকে মেনে না নেওয়া।

★ মূল বইঃ

এ বইটির মূল আলোচনায় ৩টি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যথাঃ--
১। আল্লাহর সাথে যথাযথ সম্পর্ক,
২। সংগঠনের সাথে সম্পর্ক ও
৩। সহযোগীদের সাথে সম্পর্ক।
★ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির উপায় ৪ টি। যথাঃ-
১। মৌলিক বা ফরয ইবাদতসমূহ যথাযথভাবে পালন করা।
  • শুধু ইবাদত অনুষ্ঠানই যথেষ্ট নয় বরং পূর্ণ নিয়মানুবর্তিতা, আল্লাহভীতি ও খুশু-খুজু সৃষ্টি হওয়া উচিৎ।
  • নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি এর মুল উদ্দেশ্য হাসিল করা।
  • জামায়াতে নামাজ আদায়ের লোভ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি না হলে নামাজে আল্লাহভীতি ও বিনম্রভাব সৃষ্টি হওয়া কঠিন।
  • ইবাদতের সাথে সাথে আত্মবিচারে অভ্যস্ত না হলে ইবাদতের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার সম্ভব নয়।
২। কুরআন-হাদীস সরাসরি অধ্যায়ন করা।
  • কুরআন-হাদীস নিয়মিত অধ্যয়ন না করলে বিপথে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • দস্যু বেষ্টিত বিপদ সংকুল বনপথ এবং আধুনিক জাহেলিয়াতের অন্ধকার গলিপথ অতিক্রমে অবশ্যই দ্বীনি শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রদীপ হাতে নিতে হবে।
  • প্রতিদিন অন্তত এক-আধা ঘন্টা বা পনেরো-বিশ মিনিট অধ্যয়নের কাজে ব্যয় করা।
  • তাও সম্ভব না হলে প্রত্যহ অন্তত অর্থসহ একটি আয়াত ও একটি হাদীস অনুধাবন করে তা বাস্তব জীবনে কার্যকর করার চেষ্টা চালানো।
  • ইসলামী আন্দোলনের সাহিত্য গুলো বারবার অধ্যয়ন করা।
৩। নফল ইবাদতসমূহ গুরুত্বসহকারে পালন করা।
  • নফল ইবাদতে গোপনীয়তা রক্ষা করা।
  • নফল নামাজের ক্ষেত্রে তাহাজ্জুদের নামাজের স্থান অতি উচ্চে।
  • নফল ইবাদতের মধ্যে ২য় স্থানে হচ্ছে নফল রোজা। প্রতি মাসে তিনদিন আইয়ামে বীজের রোজা রাখা। সপ্তাহে দুই দিন নফল সিয়াম পালন করা।
  • আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করা। এক্ষেত্রে সাহাবাদের অর্থব্যয়ের নজিরকে সামনে রাখতে হবে।
৪। সার্বক্ষণিক জিকির ও দোআ।
  • সংসার ত্যাগের ধারণা মিশ্রিত জিকিরের পরিবর্তে সকল কাজে দৈনন্দিন মাসনুন দোআ পাঠ করা।
  • সকাল-সন্ধ্যায় অবসর সময়ে বিভিন্ন তাসবীহ পাঠ করে মনকে কাজ দিতে হবে।
  • নিজের চরিত্র,সবর,তাওয়াক্কুল, সংযম ও ঈমানী শক্তি বৃদ্ধির জন্য দোয়া করা।
  • চিন্তা ও চেতনার সাথে হবে এবং প্রদর্শনেচ্ছামুক্ত হবে।
★ সংগঠনের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির উপায় ৪ টি। যথাঃ-
১। আদেশ ও আনুগত্যের ভারসাম্য রক্ষা করা,
২। অন্ধ আনুগত্য না করা,
৩। নেতার পরিবর্তনে আনুগত্যের পরিবর্তন না করা।
৪। নেতার গুণাবলী অর্জন করা।
৫। কর্তৃত্ব ও আনুগত্য সম্পর্কে আরো কিছু কথাঃ
- চিঠি-সার্কুলার এর আনুগত্য করা
- কোন প্রোগাম বা কাজের জন্য নির্ধারিত পদ্ধতি ও সময় মেনে চলা
- আনুগত্যের ত্রুটি গুনাহের শামিল-এ উপলদ্ধি থাকা।
- দায়িত্বানুভূতি নিয়ে দায়িত্ব পালন করা
.
★ সহযোগীদের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির উপায় ৭ টি। যথাঃ-
১। ত্বরিত সিদ্ধান্ত না নেয়া,
২। সিদ্ধান্তে অটল থাকা,
৩। উপনামে না ডাকা,
৪। মনোমালিন্য দূর করা,
৫। কু-ধারণা না করা,
৬। গোয়েন্দাগীরি না করা,
৭। গীবত না করা।
★ নেতা বা দায়িত্বশীলের গুণাবলী:-
১। কর্মীদের সাথে প্রীতিপূর্ণ বা কোমল ব্যবহার,
২। খোশ মেজাজ সম্পন্ন হওয়া,
৩। কর্মীদের দোষ-ত্রুটিকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা,
৪। কর্মীদের জন্য দোয়া করা,
৫। পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া,
৬। আল্লাহর উপর ভরসা করে সিদ্ধান্তে অটল থাকা।

No comments

Powered by Blogger.