দারসুল কোরআন সুরা আনকাবুত (৪০-৪২)

দারসুল কোরআন
সুরা আনকাবুত (৪০-৪২)

★আরবী ইবারত ও সরল বাংলা অনুবাদঃ-

ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ

فَكُلًّا اَخَذۡنَا بِذَنۡۢبِهٖ ۚ فَمِنۡهُمۡ مَّنۡ اَرۡسَلۡنَا عَلَیۡهِ حَاصِبًا ۚ وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ اَخَذَتۡهُ الصَّیۡحَۃُ ۚ وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ خَسَفۡنَا بِهِ الۡاَرۡضَ ۚ وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ اَغۡرَقۡنَا ۚ وَ مَا كَانَ اللّٰهُ لِیَظۡلِمَهُمۡ وَ لٰكِنۡ كَانُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ یَظۡلِمُوۡنَ ﴿۴۰﴾

সুতরাং ওদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ অপরাধের জন্য পাকড়াও করলাম;ওদের কারও প্রতি প্রেরণ করলাম পাথর বর্ষণকারী ঝড়,কাকেও আঘাত করল মহাগর্জন,কাকেও আমি মাটির নিচে ধসিয়ে দিলাম এবং কাকেও মারলাম ডুবিয়ে। আল্লাহ তাদের প্রতি কোন যুলুম করেননি; আসলে তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল।

So each We seized for his sin; and among them were those upon whom We sent a storm of stones, and among them were those who were seized by the blast [from the sky], and among them were those whom We caused the earth to swallow, and among them were those whom We drowned. And Allah would not have wronged them, but it was they who were wronging themselves.

مَثَلُ الَّذِیۡنَ اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اَوۡلِیَآءَ كَمَثَلِ الۡعَنۡكَبُوۡتِ ۖۚ اِتَّخَذَتۡ بَیۡتًا ؕ وَ اِنَّ اَوۡهَنَ الۡبُیُوۡتِ لَبَیۡتُ الۡعَنۡكَبُوۡتِ ۘ لَوۡ كَانُوۡا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۴۱﴾

যারা আল্লাহ ছাড়া বহু অভিভাবক গ্রহণ করে, তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সার ন্যায়, যে ঘর বানায়। আর ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো দুর্বলতম, যদি তারা জানত।

The example of those who take allies other than Allah is like that of the spider who takes a home. And indeed, the weakest of homes is the home of the spider, if they only knew.

اِنَّ اللّٰهَ یَعۡلَمُ مَا یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِهٖ مِنۡ شَیۡءٍ ؕ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَكِیۡمُ ﴿۴۲﴾
তারা আল্লাহ ছাড়া যা কিছুকে ডাকে, আল্লাহ তো তা জানেন। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

Indeed, Allah knows whatever thing they call upon other than Him. And He is the Exalted in Might, the Wise.

★সূরা পরিচিতি:- 


★ নামকরণঃ

একচল্লিশের আয়াতের অংশবিশেষ مَثَلُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِ اللَّهِ أَوْلِيَاءَ كَمَثَلِ الْعَنْكَبُوتِ থেকে সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ যে সূরার মধ্যে আনকাবুত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, এটি সে সূরা।

★নাযিলের সময়কালঃ

(২৯-আনকাবুত) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল : \n ৫৬ থেকে ৬০ আয়াতের মধ্যে যে বক্তব্য এসেছে তা থেকে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, এ সূরাটি হাবশায় হিজরতের কিছু আগে নাযিল হয়েছিল। অধিকন্তু বিষয়বস্তু গুলোর অভ্যন্তরীণ সাক্ষ্যও একথাই সমর্থন করে। কারণ, পশ্চাতপটে সে যুগের অবস্থার চিত্র ঝলকে উঠতে দেখা যায়। যেহেতু এর মধ্যে মুনাফিকদের আলোচনা এসেছে এবং মুনাফিকীর প্রথম দশটি আয়াত হচ্ছে মাদানী এবং বাকি সমস্ত সূরাটি মক্কী। অথচ এখানে যেসব লোকের মুনাফিকীর কথা বলা হয়েছে তারা কেবল কাফেরদের জুলুম, নির্যাতন ও কঠোর শারীরিক নিপীড়নের ভয়ে মুনাফিকী অবলম্বন করছিল। আর একথা সুস্পষ্ট, এ ধরনের মুনাফিকীর ঘটনা মক্কায় ঘটতে পারে, মদীনায় নয়। এভাবে এ সূরায় মুসলমানদেরকে হিজরত করার উপদেশ দেয়া হয়েছে, এ বিষয়টি দেখেও কোন কোন মুফাসসির একে মক্কায় নাযিলকৃত শেষ সূরা গণ্য করেছেন।। অথচ মদীনায় হিজরতের আগে মুসলমানগণ হাবশায়ও হিজরত করেছিলেন। এ ধারণাগুলো আসলে কোন হাদীসের ভিত্তিতে নয়। বরং শুধুমাত্র বিষয়বস্তুর অভ্যন্তরীণ সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। আর সমগ্র সূরার বিষয়বস্তুর ওপর সামগ্রিকভাবে দৃষ্টিপাত করলে এ অভ্যন্তরীণ সাক্ষ্য মক্কার শেষ যুগের নয় বরং এমন এক যুগের অবস্থার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে যে যুগে মুসলমানদের হাবশায় হিজরত সংঘটিত হয়েছিল।

★আলোচ্য বিষয়ঃ

সূরাটি পড়লে মনে হবে এটি যখন নাযিল হচ্ছিল তখন মক্কায় মুসলমানরা মহা বিপদ-মুসিবতের মধ্যে অবস্থান করছিল। কাফেরদের পক্ষ থেকে পূর্ণ শক্তিতে চলছিল ইসলামের বিরোধিতা এবং মু’মিনদের ওপর চালানো হচ্ছিল কঠোর জুলুম-নিপীড়ন। এহেন অবস্থায় মহান আল্লাহ একদিকে সাচ্চা ঈমানদারদের লজ্জা দেবার জন্য এ সূরাটি নাযিল করেন। এই সাথে এর মধ্যে মক্কায় কাফেরদেরকেও এ মর্মে কঠোর ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে যে, নিজেদের জন্য এমন পরিণতি ডেকে এনো না সত্যের সাথে শত্রুতা পোষণকারীরা প্রতি যুগে যার সম্মুখীন হয়ে এসেছে। 


। সে সময় কিছু কিছু যুবক যেসব প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছিলেন এ প্রসঙ্গে তারও জবাব দেয়া হয়েছে। যেমন তাদের পিতা-মাতারা তাদের ওপর মুহাম্মদ (সা.) এর দ্বীন ত্যাগ করে তাদের দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতো। তাদের পিতা-মাতারা বলতো, যে কুরআনের প্রতি তোমরা ঈমান এনেছো তাতেও তো লেখা আছে যে, মা-বাপের হক সবচেয়ে বেশি। কাজেই আমরা যা কিছু বলছি তাই তোমরা মেনে নাও। নয়তো তোমরা নিজেদের ঈমান বিরোধী কাজে লিপ্ত হবে। ৮ আয়াতে এর জবাব দেয়া হয়েছে। 


। অনুরূপভাবে কোন কোন নওমুসলিমকে তাদের গোত্রের লোকেরা বলতো, তোমরা আমাদের কথা মেনে নাও এবং ঐ ব্যক্তি থেকে আলাদা হয়ে যাও, এ জন্য আযাব-সওয়াব যাই হোক, তার দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করছি। যদি এ জন্য আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করেন তাহলে আমরা অগ্রবর্তী হয়ে বলে দেবোঃ জনাব, এ বেচারাদের কোন দোষ নেই। আমরাই এদেরকে ঈমান ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলাম। কাজেই আমাদের পাকড়াও করুন। এর জবাব দেয়া হয়েছে ১২-১৩ আয়াতে। 


। এ সূরায় যে কাহিনীগুলো বর্ণনা করা হয়েছে সেখানেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ দিকটিই সুস্পষ্ট করা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী নবীদেরকে দেখো, তারা কেমন কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। কত দীর্ঘকাল ধরে তারা নির্যাতিত হয়েছেন। তারপর আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের সাহায্য করা হয়েছে। কাজেই ভয় পেয়ো না। আল্লাহর সাহায্য নিশ্চয়ই আসবে কিন্তু পরীক্ষার একটি সময়কাল অতিবাহিত হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। মুসলমানদেরকে এ শিক্ষা দেবার সাথে সাথে মক্কার কাফেরদেরকেও এ কাহিনীগুলোতে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে পাকড়াও হতে দেরি হয়, তাহলে তাতে আর কোনদিন পাকড়াও হবেই না বলে মনে করে নিয়ো না। অতীতের ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলোর চিহ্ন ও ধ্বংসাবশেষ তোমাদের সামনে রয়েছে। দেখে নাও, শেষ পর্যন্ত তাদের সর্বনাশ হয়েই গেছে এবং আল্লাহ তার নবীদেরকে সাহায্য করেছেন। 


। তারপর মুসলমানদেরকে এভাবে পথনির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, জুলুম নির্যাতন যদি তোমাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে ঈমান পরিত্যাগ করার পরিবর্তে তোমরা ঘরবাড়ি ত্যাগ করে বের হয়ে যাও। আল্লাহর যমীন অনেক প্রশস্ত। যেখানে আল্লাহর বন্দেগী করার সুযোগ আছে সেখানে চলে যাও। 


। এসব কথার সাথে সাথে কাফেরদেরকে বুঝাবার দিকটিও বাদ দেয়া হয়নি। তাওহীদ ও আখেরাত উভয় সত্যকে যুক্তিসহকারে তাদেরকে বুঝাবার চেষ্টা করা হয়েছে। শির্ককে খণ্ডন করা হয়েছে। বিশ্ব-জাহানের নির্দশনাবলীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদেরকে জানানো হয়েছে যে, আমার নবী তোমাদের সামনে যে শিক্ষা পেশ করছেন এ নির্দশনাবলী তার সত্যতা প্রমাণ করছে।

★ সংক্ষিপ্ত তাফসীরঃ- 

فَكُلًّا اَخَذۡنَا بِذَنۡۢبِهٖ ۚ فَمِنۡهُمۡ مَّنۡ اَرۡسَلۡنَا عَلَیۡهِ حَاصِبًا ۚ وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ اَخَذَتۡهُ الصَّیۡحَۃُ ۚ وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ خَسَفۡنَا بِهِ الۡاَرۡضَ ۚ وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ اَغۡرَقۡنَا ۚ وَ مَا كَانَ اللّٰهُ لِیَظۡلِمَهُمۡ وَ لٰكِنۡ كَانُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ یَظۡلِمُوۡنَ ﴿۴۰﴾

সুতরাং ওদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ অপরাধের জন্য পাকড়াও করলাম;[1] ওদের কারও প্রতি প্রেরণ করলাম পাথর বর্ষণকারী ঝড়,[2] কাকেও আঘাত করল মহাগর্জন,[3] কাকেও আমি মাটির নিচে ধসিয়ে দিলাম[4] এবং কাকেও মারলাম ডুবিয়ে।[5] আল্লাহ তাদের প্রতি কোন যুলুম করেননি; আসলে তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল।[6]

[1] অর্থাৎ, উপরোক্ত প্রত্যেককে তার পাপের জন্য পাকড়াও করলাম।

[2] এ ছিল আ’দ জাতি। যাদের উপর কঠিন ঝড় আযাবরূপে এসেছিল। এ ঝড় মাটি হতে কাঁকর উড়িয়ে তাদের উপর বর্ষণ করেছিল এবং তার বেগ ও গতি ছিল এত বেশি যে, তাদেরকে আকাশের উপর উড়িয়ে নিয়ে মাটিতে আছড়ে মেরেছিল। যার ফলে তাদের মাথা ও শরীর আলাদা আলাদা হয়ে গিয়েছিল। তাদেরকে দেখে মনে হয়েছিল, যেন সারশূন্য খেজুরের কান্ড। (ইবনে কাসীর) কোন কোন মুফাসসির ‘পাথর বর্ষণকারী ঝড়’ এর শাস্তিপ্রাপ্ত লূতের জাতিকে বলেছেন। কিন্তু ইমাম ইবনে কাসীর এটিকে ভুল বলেছেন। আর এ ব্যাপারে ইবনে আব্বাসের দিকে সম্পৃক্ত উক্তিটিকে সূত্রছিন্ন বলেছেন।

[3] এরা ছিল সালেহ (আঃ)-এর জাতি সামূদ। তাদেরকে তাদের কথামত পাহাড়ের এক পাথর থেকে একটি উটনী বের করে দেখানো হয়। কিন্তু অনাচারীর দল ঈমান আনার পরিবর্তে উটনীকেই মেরে ফেলে। যার তিনদিন পর তাদের উপর এক কঠিন বিকট শব্দের আযাব আসে; যা তাদেরকে চিরতরের জন্য চুপ করিয়ে দেয়।

[4] এ ছিল কারূন, যাকে ধন-দৌলতের ভান্ডার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে এই গর্বের শিকার হল যে, এই ধন-দৌলত এই কথার প্রমাণ যে, সে আল্লাহর নিকট সম্মানিত ও প্রিয়পাত্র। আমার মূসার কথা শোনার কি প্রয়োজন? অতঃপর তাকে তার ধন ও প্রাসাদসহ মাটিতে ধসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

[5] এ ছিল ফিরআউন, মিসর রাজ্যের অধিপতি। কিন্তু সীমালংঘন করে সে নিজে ‘রব’ হওয়ার কথা দাবী করে বসে। মূসা (আঃ)-এর উপর ঈমান আনতে ও তাঁর জাতি বানী ইস্রাঈল যাদেরকে সে দাসে পরিণত করেছিল, তাদেরকে মুক্ত করতে অস্বীকার করে। শেষ পর্যন্তু এক দিন সকালে লোহিত সাগরে তার ও তার পূর্ণ সেনাবাহিনীর সলিল সমাধি ঘটানো হয়।

[6] আল্লাহর কাজ কারো উপর অত্যাচার করা নয়। এই জন্য পূর্বের যে সকল জাতির উপর আযাব এসেছিল কেবলমাত্র এই জন্যই তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছে যে, তারা কুফর ও শিরক, মিথ্যাজ্ঞান ও পাপাচার করে নিজেরা নিজেদের উপরই অত্যাচার করেছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান



مَثَلُ الَّذِیۡنَ اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اَوۡلِیَآءَ كَمَثَلِ الۡعَنۡكَبُوۡتِ ۖۚ اِتَّخَذَتۡ بَیۡتًا ؕ وَ اِنَّ اَوۡهَنَ الۡبُیُوۡتِ لَبَیۡتُ الۡعَنۡكَبُوۡتِ ۘ لَوۡ كَانُوۡا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۴۱﴾

যারা আল্লাহ ছাড়া বহু অভিভাবক গ্রহণ করে, তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সার ন্যায়(১), যে ঘর বানায়। আর ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো দুর্বলতম, যদি তারা জানত।(২)

(১) মাকড়সাকে “আনকাবূত” বলা হয়। এখানে সে মাকড়সা বোঝানো হয়েছে, যে জাল তৈরী করে এবং তাতে ঝুলতে থাকে। এই জালের সাহায্যে সে মশা-মাছি শিকার করে। বলাবাহুল্য, জন্তু জানোয়ারের যত প্রকার বাসা ও ঘর বিদিত আছে, তন্মধ্যে মাকড়সার জাল দুর্বলতর। যা সামান্য বাতাসেও ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করে এবং অন্যের উপর ভরসা করে, তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সার জাল, যা অত্যন্ত দুর্বল।

এমনিভাবে যারা কোন প্রতিমা অথবা কোন মানুষের উপর ভরসা করে, তাদের ভরসা এমন, যেমন মাকড়সা তার জলের উপর ভরসা করে। [ইবন কাসীর] বিশ্ব-জাহানের প্রকৃত মালিককে বাদ দিয়ে যারা একেবারে অক্ষম বান্দা ও সম্পূর্ণ কাল্পনিক উপাস্যদের ওপর নির্ভর করে যেমন আঙ্গুলের সামান্য একটি টোকাও বরদাশত করতে পারে না, তেমনি তোমাদের আশার অট্টালিকাও আল্লাহর ব্যবস্থার সাথে প্রথম সংঘাতেই চূৰ্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। সামান্য বৃষ্টিও যার সবকিছু বিনষ্ট করে দেয়, তোমাদের সামান্যতম উপকারও তারা করতে পারে না [দেখুন: ফাতহুল কাদীর]

সুতরাং সত্য কেবল এই যে, একমাত্র রব্বুল আলামীন ছাড়া আর কারও উপর নির্ভর করা যায় না। আল্লাহ বলেনঃ “যে ব্যক্তি তাগুতকে (আল্লাহ বিরোধী শক্তিকে) অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে সে এমন মজবুত নির্ভরকে আঁকড়ে ধরেছে যা কখনো ছিন্ন হবার নয়। বস্তুত আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন।” [সূরা আল-বাকারাহ: ২৫৬]

(২) এর দুটি অর্থ হয়। এক. যদি তারা জানত যে তাদের মা’বুদগুলো মাকড়শার জালের মত, তবে এ ধরনের মা’বুদের পিছনে কখনও থাকত না। দুই. যদি তাদের কোন জ্ঞান থাকত, তবে তারা জানত যে, আল্লাহ তাদের মা’বুদদের অবস্থা খুব ভাল করেই জানেন। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া



اِنَّ اللّٰهَ یَعۡلَمُ مَا یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِهٖ مِنۡ شَیۡءٍ ؕ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَكِیۡمُ ﴿۴۲﴾

তারা আল্লাহ ছাড়া যা কিছুকে ডাকে, আল্লাহ তো তা জানেন। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।(১)

(১) অর্থাৎ যেসব জিনিসকে এরা মা’বুদে পরিণত করেছে এবং যাদেরকে সাহায্যের জন্য আহবান করে, তাদের প্রকৃত স্বরূপ আল্লাহ ভালোভাবেই জানেন। তাদের কোন ক্ষমতাই নেই। একমাত্র আল্লাহই ক্ষমতার মালিক এবং তাঁরই বিচক্ষণ কর্মকুশলতা ও জ্ঞান এ বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থা পরিচালনা করছে। এ আয়াতের আর একটি অনুবাদ এও হতে পারে, আল্লাহ খুব ভালোভাবেই জানেন, তাঁকে বাদ দিয়ে এরা যাদেরকে ডাকে তারা কিছুই নয় (অর্থাৎ ভিত্তিহীন ও ক্ষমতাহীন) এবং একমাত্র তিনিই পরাক্রান্ত ও জ্ঞানের অধিকারী। সুতরাং অচিরেই তিনি তাদেরকে তাদের কর্মকাণ্ডের শাস্তি দিবেন। [দেখুন: ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]


তাফসীরে জাকারিয়া


★ শিক্ষাঃ

১. 

২. 

৩. 

৪. 

৫. 

মোহাম্মদ আবু হানিফ হেলাল


No comments

Powered by Blogger.