শহীদ আবদুল মালেক : একটি প্রজ্ঞাস্নিগ্ধ জীবনদৃষ্টি || মুসা আল হাফিজ

শহীদ আবদুল মালেক :   একটি প্রজ্ঞাস্নিগ্ধ জীবনদৃষ্টি 

মুসা আল হাফিজ 

কয়েকজন তরুণ এলেন । তাদের অনেক জিজ্ঞাসা। কথা দিয়ে জীবন ও জগতের জলছবি একে জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কথা কতটুকু পারে প্রকাশ করতে? শিক্ষা নিয়ে কথা হচ্ছিলো। যে শিক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা বেড়ে উঠছি, তা কি আমাদের মানিবক বিকাশের সবগুলো মাত্রাকে স্পর্শ করে? সবখানে আলো ঢালে? আমাদের সম্ভাবনার সকল উর্বর ভূমিকে সে চিনে? 


এ প্রশ্ন এমন, যার জবাবে নৈ:শব্দ পাপ, দায়সারা আলাপ অন্যায়। স্বাধীনতার আগ থেকেই শিক্ষাকে নতুন আলোকে ঢেলে সাজাবার আওয়াজ এই ভূমিতে উচ্চারিত হচ্ছে । সেজন্য ঘটেছে জীবনদানের ঘটনাও। তরুণরা যখন আবদুল মালেক এর শাহাদাতের কথা বললো, আমি সেই আত্মদানের ওজন নিয়ে ভাবতে থাকলাম।


 সারাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলো এই ঘটনা। সংবাদপত্রসমূহের লাল শিরোনাম হয়ে সবার সামনে হাজির হয়েছে এই শাহাদাত। তারপর থেকে আবদুল মালেক শিক্ষার বিউপনিবেশায়ন ও ইসলামাইজেশন অব নলেজের আকুতির সাথে একাকার হয়ে আছেন এই বাংলায়। তার এই শাহাদাত কেবল আকুতির ফসল ছিলো না। গভীর চিন্তা, অনুধ্যান ও বিশ্ববীক্ষা ছিলো এর মর্মমূলে।


সময়টা ১৯৬৯ সাল। জেনারেল আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের পতন হয়েছে। ক্ষমতায় জেনারেল জেনারেল ইয়াহিয়া খান। উর্দিপরা জেনারেলরা সবকিছুর চালক। তার স্থির করছে শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে। এয়ার মার্শাল নূর খান শিক্ষামন্ত্রী। তার নেতৃত্বে দেশের শিক্ষাধারা সংস্কার ও নবায়নের কাজ হতে নেয়া হলো। শিক্ষাকে সেক্যুলার ভাবধারায় পূনর্গঠনের চেষ্টা জোরালো হলো। যেখানে থাকবে না সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিশ্বাস, প্রত্যাশা ও জীবনবোধের প্রতিফলন । যে জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষাব্যবস্থা সাজানো হচ্ছে, সেই জনগোষ্ঠীর জীবনের প্রতিফলন যদি শিক্ষায় না থাকে, সেই শিক্ষা ব্যবস্থা বৃহত্তর কল্যাণকে আমন্ত্রণ করবে না, এটাই তো সত্য, এটাই তো স্বাভাবিক। কালচার ও শিক্ষা দুই দিকে অগ্রসর হবে। দেখা দেবে মননজাত অবক্ষয়। 


এ পরিস্থিতিতে নাগরিক সমাজ তো বটেই, সচেতন শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছিলো উদ্বেগ। ১৯৬৯ সালে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এয়ার মার্শাল নুর খানের সাথে সাক্ষাৎ করে দেশে সর্বজনীন ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা চালুর দাবি করেন। এ প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য ছিলেন আবদুল মালেক। 

শিক্ষানীতির আদর্শিক ভিত্তি কী হবে, এ নিয়ে জনমত যাচাই চলছিলো। 


এর অংশ হিসেবে সরকারি উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভবনে অনুষ্ঠিত হয় শিক্ষার আদর্শিক ভিত্তি শীর্ষক এক আলোচনা সভা (১৯৬৯ এর ২ আগস্ট)। এতে সেক্যুলার ও ইসলামপন্থীরা প্রচণ্ড বিতর্কে অবতীর্ণ হন। আবদুল মালেক জোরালোভাবে উপস্থাপন করেন সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সাধারণ শৃঙ্খলা (Common set of cultural values) এর ধারণা।


মাত্র ৫ মিনিট আলোচনার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সংক্ষিপ্ত আলোচনায় তিনি দেখান, কম্যুনিস্ট রাশিয়ার মতো একটি মাত্র সাংস্কৃতিক শৃঙ্খলা সবার উপর চাপিয়ে দিয়ে সাংস্কৃতিক বিভিন্নতাকে হত্যার চেষ্টা বড় ধরণের বিপদ তৈরী করবে, যার সাথে একমত হবার কোনো সুযোগ নেই। ১২ আগস্ট ডাকসুর ব্যানারে আরেকটি আয়োজন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে। আবদুল মালেক সেখানে আলোচনার সুযোগ চান। দেওয়া হয়নি সুযোগ। সেখানে হয় বিতণ্ডা। টিএসসিতে তার উপর সশস্ত্র হামলা করে প্রতিক্রিয়াশীল বামরা ।


 তখনকার রেসকোর্স ময়দানে তাকে নিয়ে ইট ও রড দিয়ে মাথায় অনবরত আঘাত করতে থাকে। তাদের টার্গেট ছিলো মাথা। মাথাটিকে প্রায় পিষে ফেলেছিলো। অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে চলে গিয়েছিলো তারা। সেই আঘাতেই কাতরাতে কাতরাতে ১৯৬৯ এর ১৫ আগস্ট, বাদ মাগরিব ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবদুল মালেকের মৃত্যু হয় । তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। 


আবদুল মালেক জানতেন ‘ শিক্ষা হচ্ছে মানুষের খুদী বা আত্মসত্তাকে উন্নত করার প্রচেষ্টার নাম।’, যেমনটি বলেছিলেন আল্লামা ইকবাল। শিক্ষার মাধ্যমে বিকশিত হবে মানুষের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা গুণাবলী ও সুন্দরতা। শিক্ষা আলো হয়ে খুলে দেবে দৃষ্টি, যার ফলে মানুষ জানবে নিজেকে, নিজের জগতকে। শিক্ষার মাধ্যমে তৈরী হবে সেতুবন্ধন, যা দিয়ে বস্তু ও আত্মার সুষম সমন্বয় ঘটবে জীবনে। পার্থিব জীবন ও আত্মিক জীবন হাত ধরাধরি করে হবে অগ্রসর। উভয়ের ঘটবে বিকাশ, হবে উন্নতি। সুন্দর ও পবিত্র জীবনের আকাঙ্খাকে সামনে রেখে মানুষ হিসেবে প্রগতি অর্জিত হবে মানুষের। মানুষের যে প্রগতি ঘটে মানুষ হিসেবে, সেখানে নিয়ন্ত্রিত থাকে পশুর পিপাসা, অবদমিত থাকে লোভ, শঠতা, নিষ্ঠুরতা, প্রবৃত্তির উস্কানি,- বরং বিকশিত ও উজ্জীবিত হয় মানব প্রকৃতির দাবি ও চাহিদা। এটি হয় দেহ, আত্মা ও মনের যৌথ বিকাশের মধ্য দিয়ে।


 এতে ভারসাম্য থাকবে যতোটা, বিকাশ টেকসই হবে ততোটা। 

জন মিল্টন এ বাস্তবতার কারণেই বলেছিলেন Education is the harmonious development of body, mind and soul অর্থাৎ ‘দেহ, মন ও আত্মার সমন্বিত ভারসাম্যপূর্ণ উন্নতির নামই শিক্ষা।’ এ তিনের উৎকর্ষ সাধনের আকাঙ্খা এমন কিছু, যা আপনার মধ্যে জন্ম নেবে মানুষ হিসেবে জন্ম নেবার কারণে। সেই আকাঙ্খা যখন আহত হয়, উপেক্ষিত হয়, নিষ্ঠুরতার সম্মুখিন হয়, তখন মানব সত্তা শুধু ক্রন্দন করে না, রক্তও ঝরায়। সেই রক্তপাতের ফসল আবদুল মালেকের শাহাদাত। আবদুল মালেক চাইতেন শরীর, মন ও আত্মার সুষম বিকাশের জন্য যে আদর্শ জরুরী, সেই আদর্শের অঙ্গীকারকে শিক্ষায় প্রতিস্থাপন। সন্দেহ নেই, সেই আদর্শ ইসলাম।তার সেই প্রস্তাবনা ছিলো প্রত্যয়ে প্রবুদ্ধ। 


এর পেছনে জ্ঞানীয় ও দার্শনিক যুক্তি উপস্থাপন করতেন তিনি। কেন তিনি জ্ঞানাদর্শ হিসেবে ইসলামের প্রস্তাব করছেন, এর কারণ বয়ান করার সক্ষমতা ছিলো তার। এর মানে তার পরিসর এক্টিভিস্ট এর মধ্যে সীমিত ছিলো না, চিন্তকের জায়গায় তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি ময়দানের এমন লড়াকু, যিনি চিন্তক। কিংবা এমন চিন্তক, যিনি তার জ্ঞানীয় প্রস্তাবনা ও প্রত্যয়ের প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব- দক্ষতা নিয়ে ময়দানে সরব ও আন্দোলনের সংগঠনে নিবেদিত। এমন একজনকে প্রতিক্রিয়াশীল বামপন্থা সহ্য করবে কেন? তারা তাকে হত্যা করলো নিষ্ঠুরভাবে। 


কিন্তু আবদুল মালেক যে চিন্তাসম্পদ রেখে গেছেন, তার কি মৃত্যু হয়েছে, হতে পারে? তাঁর মৃত্যুর ছয়দিন পরে দৈনিক আজাদে (২২ আগস্ট, ১৯৬৯) প্রকাশিত হয় তাঁর একটি রচনা। দীর্ঘ এই রচনা-শিরোনাম প্রত্যয়ের আলোকে আমাদের জীবন। সেখানে দেখা যায় তরুণ এক ভাবুককে, চিন্তককে। যার রচনায় বাঙময় হচ্ছে বিকাশমান এক দার্শনিক কণ্ঠস্বর। আবদুল মালেকের অন্যান্য রচনায়ও সজাগ ভাবুকের সাক্ষাত মিলে। যা তিনি লিখেছেন মাসিক পৃথিবীর বিভিন্ন সংখ্যায়। 

কাগজটিতে তিনি নিয়মিত যে কলাম লিখতেন, এর শিরোনাম ছিলো বিশ্বপরিস্থিতি।


 সেখানে তার প্রথম লেখাটি প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ এর মার্চে; (মধ্যপ্রাচ্য : বৃহr রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ক্রীড়ামঞ্চ) । এরপর ধারাবাহিকভাবে তিনি হাজির হতে থাকেন মাসিক পৃথিবীর পৃষ্ঠা সমূহে। একে একে লিখেন সিরিয়ায় আবার সামরিক বিপ্লব, (এপ্রিল, Õ৬৯) নাইজেরিয়ায় বিচ্ছিন্নতাবাদের পরিণাম, (মে, Ô৬৯) মধ্যপ্রাচ্য : বৃহr চতু:শক্তির বৈঠক, (জুন,Õ৬৯) সামরিক জান্তার কবলে সুদান , (জুলাই , Õ৬৯) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি , (আগস্ট,Õ৬৯)। এর মানে যে মাসে আবদুল মালেক শহীদ হন, সে মাসেও প্রকাশিত হয়েছে তার রাজনৈতিক বিশ্লেষণী লেখা। কিন্তু এটাই ছিলো না মাসিক পৃথিবীতে প্রকাশিত তার শেষ প্রবন্ধ। সেখানে তার সর্বশেষ রচনাটি প্রকাশিত হয় শাহাদাতের পরে, ১৯৬৯ এর অক্টোবরে। রচনা-শিরোনাম ছিলো ধর্ম ও আধুনিক চিন্তাধারা। 

তবে আবদুল মালেকের জীবনের শেষ লেখাটি হলো Ôআদর্শ জীবনÕ। যা প্রকাশিত হয় ঢাবির জৈব-রসায়ন বিভাগের মাসিকপত্র করেন্ট এ। 


আদর্শ জীবন বা ধর্ম ও আধুনিক চিন্তাধারা দর্শনজাত রচনা। ভাব ও ভাষা ছিলো স্পষ্ট। গভীর জীবনদৃষ্টি ছিলো তার । সাথে ছিলো প্রকাশের ঋজুতা। তার বয়ান ও বয়নে ছিলো লড়াকু আমেজ। যাকে বলে চীrকৃত আক্রমণ, সেটা তিনি বরাদ্ধ রেখেছেন প্রতিপক্ষের জন্য। প্রধানত মওলানা আবুল আলা মওদুদী , সায়্যিদ কুতুব শহীদ , মওলানা আবদুর রহিম প্রতিধ্বনিত হয়েছেন তার চিন্তা-প্রকাশে। এর মধ্যে একটি দার্শনিক অভিমুখ ছিলো তার। যেন এইসব চিন্তকের রস নিংড়ে নিয়ে একটি ধ্যানী , জাগ্রত ও সতেজ শিখা নিজেকে প্রজ্জলিত করেছে! জীবন সম্পর্কে দৃষ্টির প্রসার ছিলো তাঁর এবং ছিলো স্বচ্ছ অবলোকন। 


আবদুল মালেকের কাছে জীবন-মৃত্যুর দ্বন্দ্ব এই নিখিলের মর্মমূলে নিহিত সবচেয়ে প্রবল দ্বৈরথ। উভয়ের রয়েছে প্রখর স্রোত। এর মধ্যে ভাসছে সবাই। কিন্তু স্বতন্ত্র হয়ে উঠছেন তারা, যারা মহত্বে, জ্ঞানে ও কর্মে হয়ে উঠছেন আদর্শ। মরণের বিপরীতে জীবন সাগরের তরঙ্গবিক্ষুব্ধ বুকে সেই আদর্শ মানুষদের লক্ষ্য করে এগিয়ে যায় মানবযাত্রা। আদর্শ মানুষকে দেয় নৈতিকতা। তাকে বানায় সত্যের উপাসক। একটি জীবনকে আদর্শের জ্যোতি ধারণ করতে হলে তাকে হতে হবে নিষ্কলঙ্ক চরিত্রের অধিকারী। অনুকরণীয় হবার জন্য এটাই সবচেয়ে জরুরী শর্ত। কারণ চরিত্র কলুষিত যার, তাকে অনুকরণ করে গহীন অন্ধকারে হারাবে অনুরাগী মানবকাফেলা।


জীবনে সাধনার মূল কথা হচ্ছে জীবন যেসব সম্ভাবনাকে ধারণ করে, তার বিকাশ নিশ্চিত করা। অন্তর্নিহিত শক্তির সম্যক বিকাশ এক দুর্জয় সাধনা। চরিত্র গঠন এ পথের প্রথম প্রয়োজন। জীবন আদর্শ হয় শিক্ষা-দীক্ষায়, করুণায়-প্রেমে; কঠোর আত্মশাসনে। আবদুল মালেকের কাছে এই মাত্রাগুলো আদর্শ জীবনের এতো গুরুত্বপূর্ণ শর্ত, যার অনুপস্থিতিতে অসাধারণ পাণ্ডিত্যও কাউকে আদর্শ জীবনের অধিকারী বানায় না। বড়জোর তিনি হতে পারেন কৃতবিদ্য একজন, প্রতিভাবান একজন। 


আদর্শ মানুষের জন্য দরকার করুণা ও প্রেম। সত্যের প্রতি অবিচল আস্থা থাকতে হবে এবং জীবনের চরম ও পরম উদ্দেশ্যগুলোকে সাধন করতে হবে। যিনি এ পথের পথিক, তার মধ্যে জ্বলে উঠবে মানুষের ঐতিহ্য ও পারত্রিক কর্মসুষমা। আভ্যন্তরীণ প্রচ্ছন্ন শক্তির বিকাশ ঘটিয়ে মানুষকে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নতির উন্নতম শিখরে নিয়ে যেতে চায় ইসলাম, আবদুল মালেক একে স্পষ্টভাবে বয়ান করেন। তার নৈতিক প্রস্তাবনা আধ্যাত্মিকতা ও আখলাকের সমন্বয়ে বিকশিত।  যার  গন্তব্য হবে সেই পূর্ণতা, যাতে উপনীত হবার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি লাভ করে ইনসানে কামিল তথা পূর্ণ মানবের শিরোপা। যে ব্যক্তিত্বের প্রভা মিথ্যা সব আবরণ ভেদ করে জগতে জ্বলে উঠবে সত্যের শিখার মতো।তার মধ্যে আপন পরাক্রম ও সম্পন্নতা নিয়ে বিকশিত হবে ইসলামের সরস ও জীবন্ত সুন্দরতা। 


 

আবদুল মালেকের আদর্শ জীবন-ভাবনার বুনিয়াদে আছে ঈমান-বিশ্বাস। তিনি এর আলোকে বিশ্লেষণ করতে চান জীবনকে। স্রষ্টায় সমর্পন তার নিছক আধ্যাত্মিক অবস্থান নয়, এতে তার বৌদ্ধিক প্রতীতিও স্বচ্ছ। কারণ তিনি জানেন নিরঙ্কুশ স্বাধীনতার বড়াই আমরা কেউই করতে পারি না। কোনো না কোনো সত্তার সামনে জ্ঞানসারে বা অজ্ঞাতসারে হোক, আমরা মাথা নত করে দিই। সে সত্তা হতে পারে পৃথিবীর কেউ কিংবা অতিপ্রাকৃত জগতের কেউ। আবদুল মালেকের ঋজু জবানী বিষয়টিকে বাখান করছে এভাবে- ÔÔ যেদিকে তাকাই, সেদিকেই দেখব কেউ হয়ত ব্যক্তির পুজো করছে, কেউ বা হয়ত সমষ্টির পুজো করছে, অর্থাৎ পুজো-অর্চ্চনা, ইবাদত-বন্দেগি আমরা সবাই করছি। পার্থক্যটা হচ্ছে এই যে, আমি হয়তো আমার-আপনার চাইতে অনেক বড়ো কোনো মহাজাগতিক সত্তার আনুগত্য করছি, আর আপনি আপনারই মতো কোনো মানুষের অথবা তার চাইতে নিকৃষ্ট কোনো সত্তার দাসত্ব করছেন। ÕÕ 


আবদুল মালেক এই আলোচনা বিস্তারের মধ্য দিয়ে যে সিদ্ধান্তে কায়েম হন, তা হলো (ক) সৃষ্টিপ্রকৃতির দিক দিয়ে মানুষ নিরঙ্কুশভাবে স্বাধীন নয়। (খ) কোনো না কোনো সত্তার আনুগত্য মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট।

এ বৈশিষ্টের কারণেই বোধ হয় আধা নাস্তিক এক দার্শনিক বলেছিলেন ঈশ্বর যদি না-ও থাকে, তবুও নিজের প্রয়োজনে একজন ঈশ্বর সৃষ্টি করে নাও। 


ভল্টেয়ার মুক্তবুদ্ধি ও মানবপ্রগতির অন্যতম প্রবক্তা। তিনি কি পেরেছেন খোদার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে? পারেননি। যদিও ভলেটয়ারের খোদা বাইবেল বা কুরআনের খোদা নয়। খোদাকে মেনে নিলেই সত্য পাওয়া যাচ্ছে না।বরং যে খোদা আমাদের রব বা পালক নন, আমাদের কোনো খোঁজখবর রাখেন না যিনি, আমাদের জন্য যার কোনো পথনির্দেশ নেই যার, এমন খোদাকে মানা সমাধান নয়, বরং আরেক সমস্যা। কিন্তু মুশকিল হলো কেন খোদার রবুবিয়ত বা পালনকর্ম দরকার? কেন তার আনুগত্য করতে হবে? ধরা-ছোয়ার বাইরে যে সত্তা, যাকে আমরা দেখি না, যিনি ইন্দ্রিয়াতীত, তাঁর আনুগত্যের কী অর্থ? যেখানে আধুনিক জীবনবোধ ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভবযোগ্য জিনিশের সত্যতায় প্রত্যয়ী।


ঠিক প্রত্যয়ের এই জায়গায় দৃষ্টি দেন আবদুল মালেক। দেখান ইন্দ্রিয়জ বিষয়বলীকে ট্টুথ ও রিয়েলিটি বিবেচনা করার সমস্যা। এই বিবেচনা মানুষের সকল লক্ষ্য ও সাধনাকে সীমাবদ্ধ করে দেয় বস্তু ও বস্তুজগতের উন্নতির মধ্যে। মানব সত্তাকে করে দেয় অন্য বস্তুদের মতো , যা কতক অজৈব পদার্থের সমন্বয় মাত্র। মানুষের উন্নত মূল্যমান ও মানব প্রকৃতির উত্তম দিকগুলোকে করা হয় অস্বীকার। ফলে বস্তুবাদ মানবজীবনকে একটি প্রহসনে পরিণত করে। বস্তুতান্ত্রিক চিন্তায় আবার আছে বিভিন্নতা। ভোগবাদ, উপযোগবাদ, সংশয়বাদ, পুঁজিবাদ, রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ ইত্যাদি পরস্পরের বিপরীতে দ্বন্দ্বমুখর। বস্তুতান্ত্রিক সভ্যতার ঝলমলে উন্নতি মূলত বস্তুগত উন্নতি। এটা হয়েছে মানুষের সৃষ্টিশীল প্রতিভার বিস্ময়কর বিকাশের মধ্য দিয়ে। সমাজ ও সভ্যতার পরিসরের বিস্তৃতির মধ্য দিয়ে, প্রকৃতিজয়ের মধ্য দিয়ে। 


কিন্তু এর ভেতরতলে কি চরম অধ:পতনের কাতরানি শোনা যাচ্ছে না? আবদুল মালেক লেখেন- 

Ôপশ্চিমের এই সভ্যতায় আমরা পেয়েছি অনেক, কিন্তু হারিয়েছি তারও বেশি। মানবজীবনের গোটা কাঠামোকে ধ্বংস করেই এই সভ্যতা গড়ে তুলেছে এর সৌধ। বস্তুর উন্নতি জীবনের স্থায়িত্ব, শক্তি ও নিরাপত্তা আনতে পারেনি। প্রকৃতি জয়ের সংকল্প নিয়ে যে যান্ত্রিক সভ্যতার সৃষ্টি করেছিলাম- তা এখন আমাদেরই জীবনকে সংশয়ের আবর্তে নিক্ষেপ করেছে, বিঘ্নিত করেছে আমাদের গোটা অস্তিত্বকে, আমরা প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আমাদের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি আমাদের জন্যই ধ্বংসযজ্ঞের আয়োজন করছে। প্রকৃতিবিজ্ঞান মানুষের জ্ঞানের সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে সত্য, কিন্তু তার বিবেকে জাগিয়ে তুলতে পারেনি।Õ


বাস্তবতার অতল মর্মে দৃষ্টিপাতের এই যে বিভা, মালেকের দৃষ্টি সেই বিভা লাভ করেছিলো। ফলে বস্তুতান্ত্রিকতার চাকচিক্য তার মনকে কুহেলিকার শিকার বানাতে পারেনি। আচ্ছন্ন করতে পারেনি আলেয়ার বিভ্রম। বরং আমাদের জীবনের ভিত্তিমুলে তার যে আঘাত, মানবসত্তার বৈশিষ্টের সাথে তার যে নির্মমতা, মানুষকে জড়বস্তুর একটি রূপান্তর হিসেবে দেখার তার যে দৃষ্টি, মালেক একে নিয়ে আসেন সামনে। কারণ বস্তুবাদ মহাকাশের অসীম বুকে ভাসমান একটি গ্রহের বুকে নৃত্যশীল ক্রীড়নক সত্তার অধিক দাম দেয়নি মানুষকে।


আধুনিক জীবন দর্শনের দারিদ্রের মুখ্য জায়গাটি তার অধরা ছিলো না। মালেকের উন্মোচক দৃষ্টির অবলোকন বিষয়টিকে এড়িয়ে যাবার ছিলো না। দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের অসুখ ও অস্থিরতা আধুনিক মন ও জগতের একটি অবশ্যম্ভাবী ডিজিজ হয়ে উঠেছে। যা মানুষের এক সত্তার সাথে আরেক সত্তার লড়াইকে করেছে নিত্যনৈমিত্তিক। সে লড়াই দেহের সাথে আত্মার। সেখানে দেহ পাচ্ছে স্বীকৃতি ও যত্ন। আত্মা পাচ্ছে অবিচার ও উপেক্ষা। ফলে সে হয়ে উঠছে মৃতদেহ।


আবদুল মালেক দেখান আধুনিক জীবন-দর্শনে চূড়ান্ত সত্য (Absolute truth) বলতে কিছু নেই। পুরাতন সত্যের সাথে নবাগত সত্যের সংঘর্ষের ফলে দুটোই বিলুপ্ত হচ্ছে আর সেখানে Synthesis হচ্ছে নতুন আর একটি সত্যের। তাও আবার আপেক্ষিক; ক্ষণকাল পরেই মিলিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক যুগ সভ্যতা জীবনের নৈতিক ও আর্থিক দিক অস্বীকার করে কেবল দৈহিক সত্তারই পুষ্টি সাধন করে যাচ্ছে। অখণ্ড জীবনকে খণ্ড খণ্ড ভাগে ভাগ করে ভিন্ন ভিন্ন Water tight compartment গড়ে তুলেছে। ...‘ 

চূড়ান্ত সত্যের অনুপস্থিতি কেবল ব্যক্তিকে আত্মারিক্ত করছে, তা নয়। মানবজাতির অতীতের সকল শাশ্বত প্রতীতি ও অর্জনকেও করছে সংশয়ের শিকার। উপেক্ষা করছে তার মূল্যমানকে, আবেদনকে। জীবনকে ব্যাখ্যার জন্য হেগেলের Dialelical materialism কে বানানো হয়েছে মানদণ্ড। অতীত ঐতিহ্য এর ফলে হচ্ছে অনাস্থার শিকার। অস্বীকার করা হচ্ছে তাকে। বর্তমানসর্বস্ব হওয়ার ডাক আসছে চারদিক থেকে। শুধু বিদ্যমানতায় বন্দি হওয়া এ কালের এমন ব্যধি হয়ে উঠেছে, যা তার মজ্জাগত।


আবদুল মালেকের দৃষ্টি এ বাস্তবতাকে লক্ষ্য না করে পারেনি। এর ফলে সত্যবোধের যে দারিদ্র, তাকে তিনি খোলাসা করছেন এভাবে- 

Ôজীবনের পরম সত্যগুলোর ক্ষেত্রেও আপেক্ষিকতাবাদের প্রয়োগের ফলে সৃজনশীল -মানুষের কর্মপ্রেরণা অনেকখানি কমে এসেছে। কারণ, আমি আজ সে সত্যের সৃষ্টি করব— তা আগামী প্রভাতের সূর্যোদয়ের আগেই বিলীন হয়ে যাবে। ক্ষণিকের স্থায়িত্বের জন্য নিশ্চয়ই আমার মনে কোনো বৃহৎ সৃষ্টির প্রেরণা জাগতে পারে না।Õ


ক্ষণিকের মধ্যে জীবনকে আবদ্ধ করে কী আর উদযাপন করা যায়? কিন্তু এ উদযাপনও কি সহজাত স্বাভাবিকতায় হচ্ছে? আধুনিক সভ্যতা মানববিশ্বের বেঁচে থাকাকে ভীতির প্রান্তদেশে উপনীতি করেছে। আণবিক শক্তির অপব্যবহার জীবনকে করে তুলেছে সন্ত্রস্থ। ব্যক্তিমন যেভাবে সত্যরিক্ততার ফলে সংশয়ে নিমজ্জিত, তেমনি সমষ্টি -মানুষও নিরাপত্তার অনুপস্থিতিতে বৃহত্তর সংশয়ে কাতর। এখানে বল যার , টিকে থাকার অধিকার তার, এমন তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।


ফলে যে বলবান নয়, তাকে গ্রাস করে ফেলাকে অধিকার মনে করছে বলদর্পীরা। তৈরী হয়েছে অরণ্যের নিয়ম। যার দাঁত-নখ যতো শক্ত ও ধারালো, সে অন্যকে শিকার করে খাবে। পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তিগুলো তাইতো প্রাচ্যদেশীয় ক্ষুদ্র শক্তিগুলোকে শোষণ করছে , একে অন্যায্য মনে করা হচ্ছে না। Ôকারণ, নিরন্তর সংগ্রামমুখর এই পৃথিবীতে দুর্বলের বাঁচারই কোনো অধিকার নেই।Õ এই যখন বাস্তবতা, তখন আবদুল মালেক স্পষ্ট বলে দিচ্ছেন- Ôবিজ্ঞানের জয়যাত্রা তাই সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনের কোনো সমৃদ্ধি আনতে পারেনি। সংঘাতের মুখে পড়ে পড়ে কেবল মানুষ মার খাচ্ছে জীবনে সৃষ্টি হয়েছে এক গভীর শূন্যতা।Õ

আল্লাহর থেকে পলায়ন করে নিশ্চিত বিশ্বাসের প্রত্যয় হারিয়েছে আধুনিক মন। সংশয়ের আবর্তে ডুবতে ও ভাসতে থাকা যেন তার নিয়তি। সে আল্লাহকে স্বীকার করতে রাজি নয়, কিন্তু দাসত্ব করছে বস্তুর, বস্তুকে দেবতার মতো বানাচ্ছে নমস্য।


মানবজাতিকে পরিচালনার আইন প্রণয়ন করছে কিছু মানুষ। যেন তারা বিধাতা আর অন্যেরা তাদের দাস। কিন্তু কীভাবে মানুষ হতে পারে মানুষের জীবনবিধানের নিয়ন্তা, যেখানে মানবজাতির জন্য সুষ্ঠ বিধান দিতে হলে বিধানদাতার মধ্যে চারটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য থাকতেই হবে!! আবদুল মালেক জানাচ্ছেন বৈশিষ্টগুলো-


 Ôপ্রথমত, তাকে হতে হবে গোটা মানবজাতির ওপর ন্যায়পরায়ণ, যাতে করে কোনো মানুষ বা মানব সমষ্টির ওপর পক্ষপাতিত্ব না হয়। 


দ্বিতীয়ত, তাকে মানুষের দৃশ্য-অদৃশ্য, অনুভূত-অননুভূত সকল প্রকৃতির সাথেই হতে হবে পরিচিত।


 তৃতীয়ত, তাকে একই সাথে সকল মানুষের জন্যই হতে হবে কল্যাণকামী ও মঙ্গলময়।

 চতুর্থত, মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের স্রষ্টা হতে হবে।Õ


এটি তো স্পষ্ট সত্য যে, এই চার মৌলিক ও জরুরী গুণ কোনো মানুষের মধ্যে নেই। ফলে জীবন পরিচালনার জন্য যে বিধানই মানুষ দিচ্ছে, তা কল্যাণ সাধনে ব্যর্থ হচ্ছে। Ôএকটি সমস্যার সমাধান দিতে গিয়ে হাজারো সমস্যার সৃষ্টি করেছে।Õ ফলে এইসব বিকলাঙ্গ আইন ও বিধানের হাতে মানুষের জীবনের শান্তি, মুক্তি ও প্রগতির সম্ভাবনা নেই। বরং বিপদের আশঙ্কা প্রতিনিয়ত। 


জীবন বিধান দাতার চারটি মৌলিক বৈশিষ্ট্যের বিচারে সার্বভৌমত্ব ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতা কেবল আল্লাহরই হাতে অর্পণ করতে হয়। কেননা তিনি গোটা মানবজাতির জন্যই নিরপেক্ষ ও ন্যায়বিচারক। তিনিই কেবল মানুষের দৃশ্য ও অদৃশ্য প্রকৃতি নির্ণয়ের জ্ঞান রাখেন এবং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সম্যক দ্রষ্টাও তিনিই। অতএব আবদুল মালেক তাঁর জীবন দর্শনের সত্যসন্ধানকে মোহনায় উপনীত করেন । কারণ পরম নিশ্চয়তার প্রতীতি তার হয়ে গেছে। 


জীবনসঙ্কটের সমাধান বিশ্বাসের হাত দিয়ে তার ভাষিক উদগতিতে পরিষ্কার। তিনি তার শেষ সিদ্ধান্ত তাই ঘোষণা করছেন এভাবে- Ôসত্যিকার জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র কেবল তাঁরই সার্বভৌমত্ব ও বিধান মেনে নিয়েই গড়ে উঠতে পারে। সংশয়ের আবর্তে নিক্ষিপ্ত জীবন এভাবেই পেতে পারে মুক্তির সন্ধান।Õ


প্রত্যয়ের আলোকে যে জীবনকে তিনি দেখেছেন, সে জীবন আধুনিক ভাবধারা ও দর্শনের ফাঁদ ও বাঁধসমূহ পার হয়েই আপন সত্যের চেহারা প্রকাশ করলো। সে পরিষ্কার। কোনো অস্পষ্টতা নেই তার মধ্যে। এই স্পষ্ট সত্য ও জীবনবোধ কোনো যুক্তিবর্জিত অদার্শনিতায় অর্জিত হয়নি। বরং যুক্তি ও বিশ্লেষণের দৃষ্টিবান আলোকশিখা আবদুল মালেককে দিয়েছে জীবনজিজ্ঞাসার জবাব, জীবন সঙ্কটের প্রত্যয়ী সমাধান। এই জবাব ও সমাধানের যৌক্তিক সন্ধান একটি দার্শনিক মনের পরম সাধনা। জীবন আপন অন্তরালোক তুলে ধরেছিলো তার দৃষ্টিপথে। ফলে তিনি জানতেন জীবনের কাছে তিনি কী আসলে চান। মালেকের ভাষায় -আমার মা এবং ভাইরা আশা করে আছেন, আমি একটা বড় কিছু হতে যাচ্ছি। কিন্তু মিথ্যা সে সব আশা। আমি চাইনে বড় হতে, আমি ছোট থেকেই স্বার্থকতা পেতে চাই।


তিনি জানতেন তার  সাধনাকে, উদ্দেশ্যকেও। তাঁর ভাষায়- “সৎগুণ ও সৎবৃত্তির বিকাশে মানুষের জীবন মনুষ্যত্বে ও মহত্বে পূর্ণ করে জীবন ও জগতের কল্যাণ সাধনই আদর্শ জীবনের চরম লক্ষ্য, পরম উদ্দেশ্য।”


যে তরুণরা চেয়েছিলেন আবদুল মালেককে নিয়ে লিখি, তারা ঠিকই একটি দৃষ্ঠান্তকে সামনে আনতে চেয়েছেন। তরুণদের জন্য জ্ঞানে, দার্শনিক মননে, সামাজিক ও বৃহত্তর দায়িত্ববোধে, মানবকল্যাণের অঙ্গীকারে, আত্মদানের নিষ্ঠায় আবদুল মালেক এমন এক নজির, যার আবেদন ও আয়তন ক্রমপ্রসারমান।



No comments

Powered by Blogger.