কুলখানি বা চল্লিশা করা কি জায়েজ?
কুলখানি বা চল্লিশা করা কি জায়েজ?
মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন। যার সৃষ্টি আছে- তার মৃত্যুও আছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কেবল কেয়ামতের দিনই তোমাদেরকে তোমাদের কর্মফল পূর্ণ মাত্রায় দেয়া হবে। অতঃপর যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছু নয়। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)
কেউ মারা যাওয়ার পর আমাদের দেশে তার নামে বিভিন্ন দিন খাবারের আয়োজন করা হয়। মৃত্যুর চতুর্থ দিন ‘কুলখানি’র ব্যবস্থা করা হয়। আর ৪০ তম দিনে ‘চল্লিশা’ নামে বিশাল ভোজনের আয়োজন করা হয়। এখন প্রশ্ন হলো ইসলাম কি এসব অনুষ্ঠান সমর্থন করে?
মানুষ মারা গেলে মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা এবং বিভিন্ন নফল ইবাদত করে তার সওয়াব মৃতকে পৌঁছানো গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। তবে এটি একটি ব্যক্তিগত আমল। নির্দিষ্ট কোনো দিন-তারিখ ও আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই যখন ইচ্ছা তখনই এ আমল করা যায়।
কিন্তু বর্তমানে সওয়াব পৌঁছানোর এ সহজ আমলটিকে আনুষ্ঠানিক রূপ দান করে অনেক ক্ষেত্রেই গুনাহের কাজে রূপান্তর করা হয়ে থাকে।
মৃত ব্যক্তিকে সওয়াব পৌঁছানোর প্রচলিত পদ্ধতিতে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানকেই ঈসালে সওয়াবের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। অথচ আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন হয়, আনন্দের মুহূর্তে- মুসিবতের মুহূর্তে নয়।
হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ আলবাজালী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, ‘আমরা (সাহাবারা) দাফনের পর মৃতকে কেন্দ্র করে সমবেত হওয়া ও খাবারের আয়োজন করাকে ‘বিলাপ’ বলে গণ্য করতাম।’ (মুসনাদে আহমদ: ২/২০৪; ইবনে মাজাহ: ১৬১২)
মৃত ব্যক্তির জন্য কোনো দিন-তারিখ নির্ধারণ না করে গরীব-মিসকিনদেরকে খাবার খাওয়ানোটাও ঈসালে সওয়াবের একটি বৈধ পন্থা। ইদানীং মানুষ মারা গেলে খাবারের আয়োজনে সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এটি অনুচিত পদ্ধতি।
মানুষ মারা গেলে সওয়াব পৌঁছানোর জন্য ইসলামি শরিয়তে বেশ কিছু পদ্ধতি বলা হয়েছে-
মৃতদের ভালো কাজের আলোচনা করা
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে হাদিসে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (আবু দাউদ: ৪৯০০)
মৃতদের জন্য দোয়া করা
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন মানুষ মারা যায় তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমলের ফায়দা ভোগ করে সদকায়ে জারিয়া; এমন জ্ঞান, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং ওই সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম: ১৬৩১)
মৃতদের সওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে দান-সদকা করা
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, সাদ ইবনে উবাদা (রা.)-এর অনুপস্থিতিতে তার মা ইন্তেকাল করেন। তিনি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মারা গেছেন। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার কোনো উপকারে আসবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। সাদ (রা.) বলেন, আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমার ‘মিখরাফ’ নামক বাগানটি আমার মায়ের জন্য সদকা করে দিলাম। (বুখারি: ২৭৫৬)
কবর জিয়ারত করা
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি এর আগে তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, তবে এখন থেকে অনুমতি দিলাম, তোমরা কবর জিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদের দুনিয়াবিমুখ করে এবং পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (ইবনে মাজাহ: ১৫৭১)
No comments