দারসুল কোরআন//সুরা ফুরকান (৬১-৭১)
দারসুল কোরআনসুরা ফুরকান (৬১-৭১)
আরবী ইবারত
تَبَارَكَ الَّذِي جَعَلَ فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَجَعَلَ فِيهَا سِرَاجًا وَقَمَرًا مُّنِيرًا
﴿وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ خِلْفَةً لِّمَنْ أَرَادَ أَن يَذَّكَّرَ أَوْ أَرَادَ شُكُورًا﴾
﴿وَعِبَادُ الرَّحْمَٰنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا﴾
﴿وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا﴾
﴿وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا﴾
﴿إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا﴾
﴿وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَٰلِكَ قَوَامًا﴾
﴿وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا﴾
﴿يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا﴾
﴿إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا﴾
﴿وَمَن تَابَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَإِنَّهُ يَتُوبُ إِلَى اللَّهِ مَتَابًا﴾
وَٱلَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ ٱلزُّورَ وَإِذَا مَرُّواْ بِٱللَّغْوِ مَرُّواْ كِرَامًا, (৭২)
وَٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُواْ بِـَٔـايَـٰتِ رَبِّهِمْ لَمْ يَخِرُّواْ عَلَيْهَا صُمًّا وَعُمْيَانًا, (৭৩)
وَٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَٲجِنَا وَذُرِّيَّـٰتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَٱجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا, (৭৪)
أُوْلَـٰٓئِكَ يُجْزَوْنَ ٱلْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُواْ وَيُلَقَّوْنَ فِيهَا تَحِيَّةً وَسَلَـٰمًا, (৭৫)
خَـٰلِدِينَ فِيهَاۚ حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا, (৭৬)
সরল বাংলা অনুবাদ
৬১- অসীম বরকত সম্পন্ন তিনি যিনি আকাশে বুরুজ নির্মাণ করেছেন এবং তার মধ্যে একটি প্রদীপ ও একটি আলোকময় চাঁদ উজ্জল করেছেন।
৬২- তিনিই রাত ও দিনকে পরস্পরের স্থলাভিষিক্ত করেছেন এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে শিক্ষা গ্রহণ করতে অথবা কৃতজ্ঞ হতে চায়।
৬৩- রাহমানের (আসল) বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়, তোমাদের সালাম।
৬৪- তারা নিজেদের রবের সামনে সিজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়ে দেয়।
৬৫- তারা দোয়া করতে থাকেঃ- “হে আমাদের বর! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের বাঁচাও, তার আযাব তো সর্বনাশা।
৬৬- আশ্রয়স্থল ও আবাস হিসেবে তা বড়ই নিকৃষ্ট জায়গা।
৬৭- তারা যখন ব্যয় করে তখন অযথা ব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করেনা। বরং উভয় প্রান্তিকের মাঝামাঝি তাদের ব্যয় ভারসাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে।
৬৮- তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না, আল্লাহ যে প্রাণকে হারাম করেছেন কোন সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। – এসব যে-ই করে সে তারা গোনাহের শাস্তি ভোগ করবে।
৬৯- কিয়ামাতের দিন তাকে উপর্যুপরি শাস্তি দেয়া হবে এবং সেখানেই সে পড়ে থাকবে চিরকাল লাঞ্ছিত অবস্থায়।
৭০- তবে তারা ছাড়া যারা (ঐসব গোনাহের পর) তাওবা করেছে এবং ঈমান এনে সৎকাজ করতে থেকেছে। এ ধরনের লোকদের অসৎ কাজগুলোকে আল্লাহ সৎকাজের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন এবং আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।
৭১- যে ব্যক্তি তাওবা করে সৎ কাজের পথ অবলম্বন করে, সে তো আল্লাহর দিকে ফিরে আসার মতই ফিরে আসে।
সূরা পরিচিতি
ইহা কুরআনের ২৫তম সূরা।
সূরার মোট আয়াত সংখ্যা-৭৭
সূরার মোট রুকু সংখ্যা-৬
ইহা একটি মাক্কী সূরা।
আলোচ্য আয়াত ৬১-৭১
নামকরণ
সূরার প্রথম আয়াত تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ থেকে। নামকরণ
আলামত ভিত্তিক, কিন্তু নামের সাথে বিষয়বস্তুর মিল আছে।
নাযিলের সময়কাল
★বিষয়বস্তু বলে সূরা মুমিনুনের সম-সময়ে নাযিল। তথা মক্কী জীবনের মাঝামাঝি সময়ে।
★ইবনে জারীর ও ইমাম রাযী যাহ্হাক ইবনে মুযাহিম ও মুকাতিল ইবনে সালাইমানের বর্ণনা মতে-ইহা সূরা নিসার ৮ বছর আগে নাযিল হয়। সে অনুযায়ীও এর নাযিলের সময় মক্কী যুগের মাঝামাঝি সময়ে।
বিষয়বস্তু ও কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়
﴿تَبَارَكَ الَّذِي جَعَلَ فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَجَعَلَ فِيهَا سِرَاجًا وَقَمَرًا مُّنِيرًا﴾
৬১- অসীম বরকত সম্পন্ন তিনি যিনি আকাশে বুরুজ নির্মাণ করেছেন এবং তার মধ্যে একটি প্রদীপ ও একটি আলোকময় চাঁদ উজ্জল করেছেন।
﴿وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ خِلْفَةً لِّمَنْ أَرَادَ أَن يَذَّكَّرَ أَوْ أَرَادَ شُكُورًا﴾
৬২- তিনিই রাত ও দিনকে পরস্পরের স্থলাভিষিক্ত করেছেন এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে শিক্ষা গ্রহণ করতে অথবা কৃতজ্ঞ হতে চায়।
﴿وَعِبَادُ الرَّحْمَٰنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا﴾
৬৩- রাহমানের (আসল) বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়, তোমাদের সালাম।
রাহমানের বান্দা মানে কি?
· ‘রাহমান’ রেহেম শব্দ থেকে যার উৎপত্তি। রেহেম বলা হয় ‘রক্ত সম্পর্ক’কে।
· মায়ের যে স্থানে বাচ্ছা অবস্থান করে, সে স্থানকে বলে ‘রেহেম’। রেহেমে অবস্থানকারীর সাথে মায়ের রহম বা ভালবাসার সম্পর্ক চিন্থা করুন। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসার কথা চিন্থা করুন। আল্লাহ হলেন সেই রকমের ভালবাসার অবস্থান থেকে রেহেম। আর রেহেম থেকে তিনি রাহমান।
· হাদীসে কুদসীঃ আবু হুরায়রা রা. নবী সা. থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির কাজ শেষ করার পর ‘রাহেম’ বা ‘রক্ত সম্পর্ক’ রাহমানের ইযার ধরে কিছু আরয করতে চাইলো। আল্লাহ বললেনঃ থামো। সে বললোঃ রক্ত সম্পর্ক ছিন্নকারী থেকে আমি তোমার নিকট পানাহ চাই। আল্লাহ বললেনঃ যে তোমার সাথে সম্পর্ক অটুটু রাখবে, আমি তার সাথে সম্পর্ক রাখবো, আর যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমি তার সংগে সম্পর্ক ছিন্ন করবো, এতে কি তুমি সন্তুষ্ট নও? সে বললোঃ অবশ্যি হে আল্লাহ। তিনি বললেনঃ এটাই তোমার প্রাপ্য।
· কুরআনে রাহমান শব্দটি এসেছেঃ ৫৭ বার।
· কুরআনে ইবাদ শব্দটি এসেছেঃ ২৪ বার।
· কিন্তু ইবাদুর রাহমান এসেছেঃ মাত্র ২টি স্থানে। একটি এই সূরা আল ফুরক্বানে, আর অপরটি সুরা আয যুখরুফে।
· কুরআনে সূরা আয যুখরুফে বলা হয়েছেঃ
وَجَعَلُوا الْمَلَائِكَةَ الَّذِينَ هُمْ عِبَادُ الرَّحْمَنِ إِنَاثًا أَشَهِدُوا خَلْقَهُمْ سَتُكْتَبُ شَهَادَتُهُمْ وَيُسْأَلُونَ
“ওরা ফেরেশতাদেরকে-যারা দয়াময় আল্লাহ খাস বান্দা-স্ত্রীলোক গন্য করেছে। এরা কি তাদের দৈহিক গঠন দেখেছে? এদেও সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ কওে নেয়া হবে এবং সে জন্য এদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।” (আয়াত-১৯)
· জন্মগত ভাবে সবাই রহমানের বান্দা।
· আল্লাহর পছন্দনীয় ও প্রিয় বান্দা তারা, যারা সচেতনতা সহকারে বন্দেগীর পথ অবলম্বন করে ঐসব গুনাবলী নিজেদের মাঝে সৃষ্টি করে নেয়।
· এখানে কেন বলা হলো না, إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا ? এর জবাব হচ্ছেঃ
১. এখানে মূলত পূর্ববর্তী আয়াত (নং-৫৯ ও ৬০) এর দিকে ইশারা করা হচ্ছে, যেখানে রাহমানের প্রসংশা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছেঃ
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اسْجُدُوا لِلرَّحْمَٰنِ قَالُوا وَمَا الرَّحْمَٰنُ أَنَسْجُدُ لِمَا تَأْمُرُنَا وَزَادَهُمْ نُفُورًا
“তাদেরকে যখন বলা হয়, এই রহমানকে সিজদা করো তখন তারা বলে ‘রহমান কি?’ তুমি যার কথা বলবে তাকেই কি আমরা সেজদা করতে থাকবো? এ উপদেশটি উলটো তাদের ঘৃণা আরো বাড়িয়ে দেয়?
২. ৫৯-৬০ তে রাহমান সম্পর্কে বলা হয়েছে, আর এখানে রাহমানের বান্দাদের কথা বলা হয়েছে।
রাহমানের বান্দাঃ ওরা কারা?
· الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ
· রাহমানের বান্দাকে জমিনে চলাফেরা করতে হবে।
· রাহমানের বান্দারা জাহেলিয়াতের সয়লাব আর রক্ষচক্ষু দেখে ঈমান রক্ষার শপথ নিয়ে মসজিদে আশ্রয় নিলে হবেনা, ময়দানে থাকতে হবে।
· জমিনে ইয়ামশী করতে হবে, হাটাহাটি করতে হবে। আদালতে আখেরাতে জমীনের প্রতিটি বালুকনা তার তৎপরতার পক্ষে সাক্ষী হয়ে দাড়াবে এমন ভাবে হাটতে হবে।
· সূরা মুমিনুনে মুমিনের বৈশিষ্ট বলা হয়েছে যে, সে নামাযে বিনয়াবনত-الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
· আর সেই বিনম্র মানুষ গুলোর ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, নামায শেষ হলে যেন মসজিদে পড়ে না থাকে। বরং ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ে। সূরা জুমুয়াতে বলা হয়েছেঃ
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ
মানেঃ নামায শেষ এখন সমাজের দিকে নজর দিতে হবে, সমাজের মাঝে নামাযের শিক্ষাকে ফুটিয়ে তুলতে হবে। দাওয়াতের মাধ্যমে সমাজকে আল্লাহর রঙে রঙিন করতে হবে।
· কিভাবে চলবে? هَوْنًا – নম্রভাবে। নম্রভাবে মানেঃ يعني بسكينة وتواضع
· লোকমান হাকীম তার ছেলেকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেনঃ
وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
“পৃথিবীর বুকে চলো না উদ্ধত ভঙ্গিতে, আল্লাহ পছন্দ করেন না আত্মম্ভরী ও অহংকারীকে।”
(সূরা লোকমানঃ ১৮)
· সূরা বনী ইসরাঈলে বলা হয়েছেঃ
وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّكَ لَنْ تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَنْ تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولًا
“যমীনে দম্ভভরে চলো না। তুমি না যমীনকে চিওে ফেলতে পারবে, না পাহাড়ের উচ্চতায় পৌছে যেতে পারবে।” (আয়াত-৩৭)
· তাহলে কিভাবে চলতে হবে? ঐ লোকমান হাকীমই তার ছেলেকে বলছেনঃ
وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ ۚ إِنَّ أَنكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ
“নিজের চলনে ভারসাম্য আনো এবং নিজের আওয়াজ নিচু করো। সব আওয়াজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে গাধার আওয়াজ।” (সূরা লোকমানঃ ১৯)
o هَوْنًا অর্থ নম্রভাবে চলাফেরা করে।
o নম্রভাবে চলা মানে কৃত্রিম ভাবে চলার ভংগী সৃষ্টি করা নয়।
o নবী সা. চলার সময় শক্তভাবে পা ফেলতেন, যাতে মনে হতো তিনি কোন ঢালুর দিকে নেমে যাচ্ছেন।
o উমরের হাদীস প্রমাণ করে নম্রভাবে চলা মানে স্বাভাবিক ভাবে চলা।
o যে চলায় কৃত্রিমতা আছে বা বানোয়াট দীনতা ও দূর্বলতার প্রকাশ আছে, তা নম্রভাবে চলা নয়।
o উমর রা. এর একটি হাদীস-
– নম্র ভাবে চলা মানে শান্তভাবে চলা অহংকার না করা।
– চলার বিষয়টি মুমিনের গুণের মাঝে কেন?
১. চলা শুধু মাত্র হাটার ভংগীর নাম নয়। বরং মন-মানস, চরিত্র ও নৈতিক কার্যাবলীর প্রত্যক্ষ প্রতিফলন।
২. চলার ধরণ দেখে ব্যক্তিত্বের ধরণ অনুমান করা যায়।
৩. রাহমানের বান্দা যারা, তাদেরকে চিনা যায় পূর্ব পরিচিতি ছাড়াই। রাহমানের গোলামীর ফলে মন মানসিকতা ও চরিত্র যে ভাবে তৈরী হয়, তার প্রভাব পড়ে তার চাল চলনে।
৪. রাহমানের বান্দাদের দিকে প্রথম দৃষ্টিতেই যে একীন হয় তা হলো-
ক. তারা ভদ্র।
খ. তারা ধর্য্যশীল।
গ. তারা সহানুভূতিশীল।
ঘ. তারা হৃদয়বৃত্তির অধিকারী।
ঙ. তারা, যাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশংকা নেই।
রাহমানের বান্দাঃ যখন জাহেলরা তাদের সাথে কথা বলতে আসে, তখন কি অবস্থা হয়?
· خَاطَبَهُمُ জমিনে চলার সময় মুখ বন্ধ করে থাকবেনা, কথা বলতে হবে।
· কথা বলার সময় সাবধান থাকতে হবে।
· যখন জাহেলদের সাথে কথা বলবে, তখন বেশী সাবধান। তারা উল্টা-পাল্টা কথা বললে, সালাম দিয়ে কেটে পড়তে হবে।
· سلاما মানে معروف তথা ভাল কথা বলা।
· রাহামানের বান্দাদের পদ্ধতি হলো-তারা গালির জবাবে গালি বা দোষারোপের জবাবে দোষারোপ, বেহুদার জবাবে বেহুদা নয়। বরং এহেন সময়ে তাদের সালাম দিয়ে কেটে পড়ে।
· وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ “বিতর্ক করো উত্তম পন্থায়”। (সূরা আন নাহলঃ ১২৫)
· কুরআনে অপর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ وَقَالُوا لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ
“আর যখন তারা কোন বেহুদা কথা শোনে, তা উপেক্ষা করে যায়। বলে, আরে ভাই আমাদের কাজের ফল আমরা পাবো এবং তোমাদের কাজের ফল তোমরা পাবে। সালাম তোমাদের, আমরা জাহেলদের সাথে কথা বলি না।” (সূরা আল কাসাসঃ ৫৫)
· আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী মুসলমানদের সম্পর্কে জানতেঃ
· একটি প্রতিনিধি দল মক্কায় আসে এবং রাসূল সা. এর সাথে সাক্ষাত করার পর ঈমানও আনে। যাবার পথে কাফেরদের সাথে আলোচনার পর তারা কাফেরদের বলে “ভাইয়েরা, তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা তোমাদের সাথে জাহেলী বিতর্ক করতে চাই না। আমাদের পথে আমাদের চলতে দাও। তোমরা তোমাদের পথে চলতে থাকো। আমরা জেনে বুঝে কল্যাণ থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করতে পারিনা।”
· আমরা রাজনৈতিক আডডা দিতে খুবই পছন্দ করি। তর্কে তর্কে ঘন্টা পার। কিন্তু ইতিহাস বা অভিজ্ঞতা বলেঃ এই ধরণের বিতর্ক আর আড্ডাবাজির মাধ্যমে কেউ আল্লাহর পথে, সত্য ও সুন্দরের পথে আসেনা।
· আমাদেরকে পরিকল্পিত ভাবে টার্গেট ভিত্তিক সম্প্রীতি স্থাপনের মাধ্যমে উত্তম পন্থা আর সুন্দর যুক্তি উপস্থাপন করে আল্লাহর পথের দিকে দাওয়াত দিতে হবে। দাওয়াত কোন দল বা সংগঠনের দিকে নয়, দাওয়াত আল্লাহর পথের দিকে – ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ
﴿وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا﴾
৬৪- তারা নিজেদের রবের সামনে সিজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়ে দেয়।
· কুরআনে রাহমানের বান্দাদের ঐ গুণের ব্যাপারে বলা হয়েছে-
تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا
“তাদের পিঠ বিছানা থেকে আলাদা থাকে, নিজেদের রবকে ডাকতে থাকে আশায় ও আশংকায়। (সূরা সাজদায়-১৬)
كَانُوا قَلِيلًا مِنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ ** وَبِالْأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
“এ সকল জান্নাতবাসী ছিল এমন সব লোক যারা রাতে সামান্যই ঘুমাতো এবং ভোর রাতে মাগফিরাতের দোয়া করতো”। (যারিয়াতঃ ১৭-১৯)
أَمْ مَنْ هُوَ قَانِتٌ آَنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآَخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ
“যে ব্যক্তি হয় আল্লাহর হুকুম পালনকারী, রাতের বেলা সিজদা করে ও দাঁড়িয়ে থাকে, আখেরাতকে ভয় করে এবং নিজের রবের রহমতের প্রত্যাশা করে তার পরিণাম কি মুশরিকের মতো হতে পারে?” (যুমারঃ ৯)
· মবিতঃ রাত্রী যাপনকে আরবীতে বলা হয়-মবিত।
· হজ্জের সময় হাজী সাহেবরা ৩ রাত মিনাতে রাত্রী যাপন করে আল্লাহর নিবেদনে সময় পার করেন। এই রাত্রী যাপন করা ওয়াজিব। আর এই কাজটাকে বলা হয় ‘মবিত’।
· রাহমানের বান্দারা রাতে শুধু ঘুমায়না।
· রাত আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন বিশ্রামের জন্য। সূরা আন নাবা-তে বলা হয়েছেঃ
وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا ** وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا
“রাতকে করেছি আবরণ আর দিনকে করেছি জীবিকা আহরণের সময়।”
· বিধায় আবরণ যখন আছে, তখন বিশ্রাম নিতে হবে। আর দিনের বেলা অন্যের পকেটের দিকে না তাকিয়ে পরিশ্রম করতে হবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিকের জন্য তালাশ করতে হবে।
· হযরত হোসাঈন বিন আলী রা. রাতকে ৩ভাগে ভাগ করেছিলেন। ১.রাতের খাবার ও এশার নামায আর প্রস্তুতি। ২. ঘুম। ৩. তাহাজ্জুদ ও নফল ইবাদত।
· রাতের বেলা কিয়াম আর সুজুদ কেন?
· রাতের বেলার কিয়াম আর সুজুদ হালকা যিকিরের জন্য নয়।
· যিকির হবে দিনের বেলা প্রতিটি কাজে প্রতিটি মুহুর্তে।
· যিকির হবে রাসূলের দেখানো মতে মাসনুন যিকির।
· রাত হলো দোয়ার জন্য। কি দোয়া? জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া।
· জালালাইনের ভাষায়-قائمين يصلون بالليل
· মানে রাহমানের বান্দাদের দিনের জীবন ও রাতের জীবনের পার্থক্য হলো-দিনে জমিনে নম্রভাবে চলা ফেরা করে এবং কাফেরদের সাথে বিতর্কে না জড়িয়ে তাদের বেহুদা কথার জবাবে সালাম জানায়। কিন্তু রাতে ঐ রাহমানের বান্দা চলে অন্য ভাবে।
· রাহমানের বান্দা জাহেলী যুগের রীতি অনুযায়ী রাতে আরাম আয়েশ, নাচ-গান, খেলা-তামাশা, গল্প-গুজব এবং আড্ডাবাজী ও চুরি-চামারিতে অতিবাহিত করেনা।
· রাহমানের বান্দা ইসলামী রীতি অনুযায়ী-রাত কাটে তাদের আল্লাহর ইবাদতে-দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে দোয়া ও ইবাদাতের মধ্য দিয়ে।
﴿وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا﴾
৬৫- তারা দোয়া করতে থাকেঃ “হে আমাদের বর! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের বাঁচাও, তার আযাব তো সর্বনাশা।
· মানে ইবাদত করার পরও তারা অহংকার করেনা, তাকওয়ার জোরে জান্নাতে প্রবেশের চিন্তা করেনা। বরং নিজেদের মানবিক দূর্বলতার কথা মনে করে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের ওপর ভরসা করে।
﴿إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا﴾
৬৬- আশ্রয়স্থল ও আবাস হিসেবে তা বড়ই নিকৃষ্ট জায়গা।
﴿وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَٰلِكَ قَوَامًا﴾
৬৭- তারা যখন ব্যয় করে তখন অযথা ব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করেনা। বরং উভয় প্রান্তিকের মাঝামাঝি তাদের ব্যয় ভারসাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে।
· সূরা বনী ইসরাইলে বলা হয়েছেঃ
وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَى عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَحْسُورًا مَلُوماً مَحْسُوراً
“নিজের হাত গলায় বেঁধে রেখো না এবং তাকে একেবারে খোলাও ছেড়ে দিয়ো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অক্ষম হয়ে যাবে।” (আয়াত-২৯)
· সূরা বনী ইসরাইলে আরো বলা হয়েছেঃ
وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا**إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا
“বাজে খরচ করো না। যারা বাজে খরচ করে তারা শয়তানের ভাই আর শয়তান তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ”। (আয়াত-২৬,২৭)
· সম্পদ জমা করা নামক জিনিসটাকে আল্লাহ কুরআনে ডিম তা দেয়ার সাথে তুলনা করে বলেছেন আগুন তাদেরকে তাদের কাছে ডাকবে-
تَدْعُو مَنْ أَدْبَرَ وَتَوَلَّىٰ**وَجَمَعَ فَأَوْعَىٰ
“তাদেরকে সে অগ্নিশিখা উচ্চ স্বরে নিজের কাছে ডাকবে, যারা সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, পৃষ্ট প্রদর্শণ করেছিল আর সম্পদ জমা করে ডিমে তা দেযঅর মতো করে আগলে রেখেছিল” (সূরা মায়ারিজঃ ১৭,১৮)
· তাফসীরে মাযহারীর বর্ণনা অনুযায়ী হযরত ইবনে আব্বাসের তাফসীর হলো-“গোনাহের কাজে যা-ই ব্যয় করা হয়, তাই অপব্যয়।
· ইসলামের অবস্থান এ দূ’টির মধ্যখানে। নবী সা. বলেন-مِنْ فِقْهِ الرَّجُلِ رِفْقُهُ فِي مَعِيشَتِهِ
· “নিজের অর্থনৈতিক বিষয়াদিতে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা মানুষের ফকীহ (বা বুদ্ধিমত্তা) হবার অন্যতম আলামাত।”
· রাসূল সা. বলেন- مَا عَالَ مَنِ اقْتَصَدَ“যে ব্যক্তি ব্যয়ে মধ্যবর্তিতা ও সমতার উপর কায়েম থাকেম সে কখনও ফকীর ও অভাবগ্রস্ত হয়না।
· একদল ভাইয়ের কথা-
o উনারা ঋণ করতে উস্তাদ।
o উনার ঋণ নিতে জানেন-দিতে জানেন না।
o উনারা একটার পর একটা প্রজেক্ট নিতেই আছেন। ঋণের পর ঋণ নিতেই আছেন। অনেক কিছু করার প্রত্যাশায় আয়ের চেয়ে ঋণ বেশী হওয়াতে পাওনাদারের ঋণ পরিশোধের টেনশনে উনি অস্তির। যার কারণে সুখ পাখিটা উনার জীবনে সোনার হরিণ। উনার ধারাবাহিক প্রজেক্ট আর ধারাবাহিক ঋণের কারণে উনার কাছ থেকে কোন দিন কেউ ঋণ নেয়ার সুযোগ পায়না।
o উনারা প্লটের মালিক, ফ্লাটের মালিক। তাই উনারা ইন্সটলমেন্ট প্রদানের ব্যস্ততায় নিজের হাত খালি। উনারা কোটি কোটি টাকার মালিক। কিন্তু বিপদে পড়ে উনাদের কাছে ঋণ চাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিনা।
o একজন বিয়ে করবেন, আর আরেকজন মেয়ে বিয়ে দেবেন-এজন্য নিজের কোন পরিকল্পনা নাই। সময় আসলে ঋণ করছেন।
o এজন ঋণ দাতা ভাই। উনার বাজেট হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা। এই টাকা থেকে উনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে ঋণ দিয়ে থাকেন। এক পক্ষ পরিশোধ করলে অন্য পক্ষকে ঋণ দেন। এখন এই ভাই বলছেন, তার কাছ থেকে একজন ২০ হাজার টাকা কর্জ নিয়ে ৫বছর হয়ে গেলো, তিনি ঋণ পরিশোধ করছেন না। ফলে অন্য ঋণ প্রার্থী ভাই বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার উনিও দ্বিতীয় বার ঋণ চাইতে পারতেছেন না।
· তদানিন্তন আরবে দূ’ধরনের লোক ছিল-
১. এমন ধরনের লোক যে, তারা বিলাসিতায় প্রচুর খরচ করে।
২. এমন ধরনের অর্থ লোভী লোক, যারা গুনে গুনে পয়সা রাখে-নিজে খায়না, অন্যকে খাওয়ায় ও না।
· ভারসাম্য লোকের সংখ্যা ছিল খুবই কম। আর যারা ছিলেন তারা হলেন নবী সা. ও তাঁর সাহাবীরা।
· ইসলামের দৃষ্টিতে অমিতব্যয়িতা-ইসলাম অর্থ ব্যয়ে যে দৃষ্টিভংগী পোষণ করে, তাহলোঃ
১. অবৈধ কাজে অর্থ ব্যয় করা।
২. বৈধ কাজে অর্থ ব্যয় করতে সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া।
৩. সৎ কাজে অর্থ ব্যয়, কিন্তু আল্লাহর জন্য নয়-বরং মানুষকে দেখাবার জন্য।
ইসলামের দৃষ্টিতে কার্পণ্য-একই ভাবে ইসলাম কার্পন্যের ক্ষেত্রেও একটি স্বচ্ছ দৃষ্টিভংগী পোষণ করে। আর তা হলোঃ
১. নিজের ও পরিবারের প্রয়োজন পুরণে সামর্থ ও মর্যাদা অনুযায়ী ব্যয় না করা।
২. ভাল ও সৎ কাজে পকেট থেকে পয়সা বের না হওয়া।
﴿وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا﴾
৬৮- তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না, আল্লাহ যে প্রাণকে হারাম করেছেন কোন সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। – এসব যে-ই করে সে তারা গোনাহের শাস্তি ভোগ করবে।
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ
“তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না।”
· সূরা বনী ইসরাইলে বলা হয়েছেঃ
لَا تَجْعَلْ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آَخَرَ فَتَقْعُدَ مَذْمُومًا مَخْذُولًا ** وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ
“আল্লাহর সাথে দ্বিতীয় কাউকে মাবুদে পরিণত করো না। অন্যথায় নিন্দিত ও অসহায়-বান্ধব হারা হয়ে পড়বে। তোমার রব ফায়সালা করে দিয়েছেনঃ তোমরা কারোর ইবাদত করো না, একমাত্র তাঁরই ইবাদত করো।” (আয়াত-২২,২৩)
· হাদীসঃ “রাসূল সা. কে প্রশ্ন করা হলো, সবচেয়ে বড় গোনাহ কি? তিনি বললেন- أَنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ“তুমি যদি কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ প্রতিদ্বন্ধি দাঁড় করাও। অথচ আল্লাহই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। প্রশ্ন করা হলো-তার পর? বললেন- أَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ خَشْيَةَ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ “তুমি যদি তোমার সন্তানকে হত্যা কর, এই ভয়ে যে, সে তোমার সাথে আহারে অংশ নেবে।” বলা হলো-তারপর? নবী সা. বললেন- أَنْ تُزَانِيَ بِحَلِيلَةِ جَارِكَ “তুমি যদি তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা কর।”
· আরবরা তিনটি গুনাহের সাথে খুব বেশী জড়িত ছিল। রাহমানের বান্দাদেরকে গুণ হলো, ঐ তিনটি গুনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। গুনাহ তিনটি হলোঃ
১. শিরক।
২. অন্যায় ভাবে হত্যা।
৩. যিনা।
· প্রশ্ন জাগতে পারে যে, শিরক করা মুশরিকদের নিকজ গোনাহের কাজ মনে হতো না? এর জবাব-
মুশরিকদের নিকট তাদের দেবতার কদর তেমন ছিলনা, যেমন কদর ছিল আল্লাহর। যেমন-
১. আবরাহার হামলার সময়-
তদানিন্তন সময়ের ইয়ামানের বাদশা ‘আবরাহাহ’ কাবাঘর ধ্বংস করার জন্য বিশাল হাতির বহর নিয়ে মক্কায় উপস্থিত হয়। তখন মক্কাবাসী প্রতিরোধ করার মতো কোন শক্তি ছিল না। সেই সময়ে কাবাঘরে ৩৬০টি মূর্তি বর্তমান ছিল। কিন্তু মক্কাবাসীর এ বিশ্বাস ছিল যে, ওরা কাবাঘর রক্ষা করতে পারবেনা। তাই তারা সবাই মিলে পার্শবর্তী পাহাড়ে আশ্রয় নিল এবং সেখানে তারা কাবাঘরের মালিকের কাছে প্রার্থনা করতে থাকলো।
২. আবরাহার ঘটনার পর কবিদের কবিতার বিবরণ-( عبدالله بن الزبعرى) কবিতাঃ
تنكلوا عن بطن مكة إنها كانت قديما لا يرام حريمها
لم تخلق الشعرى ليالي حرمت إذا لا عزيز من الأنام برومها
سائل أمير الجيش عنها ما رأى ولسوف يُنبي الجاهلين عليمها
ستونألفا لم يئوبوا أرضهم ولم يعش بعد الإياب سقيمها
كانت بها عاد وجرهم قبلهم والله من فوق العباد يقيمها
১. আবরাহাকে সাহায্যকারী পথ প্রদর্শক তায়েফের লোকদের কবরে প্রস্তর নিক্ষেপ করতে দেখা যায়।
২. কুরাইশরা নিজেদের দ্বীনকে ইব্রাহীমের দ্বীন মনে করতো। তারা বিশ্বাস করতো যে, ইব্রাহীম আ. কখনো মূর্তি পূজা করেননি। আর কুরআনে যে কথাটা বলা হয়েছে এই ভাবেঃ
إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً قَانِتًا لِّلَّهِ حَنِيفًا وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِين
“প্রকৃত পক্ষে ইব্রাহীম নিজেই ছিল একটি পরিপূর্ণ উম্মত, আল্লাহর হুকুমের অনুগত এবং একনিষ্ঠ। সে কখনো মুশরিক ছিল না।” (সূরা আন নাহলঃ ১২০)
ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
“অতঃপর আমি তোমার কাছে এই মর্মে ওহী পাঠাই যে, একাগ্র হয়ে ইব্রাহীমের পথে চলো এবং সে মুশরিকদের দলভূক্ত ছিল না।” (সূরা আন নাহলঃ ১২৩)
১. আরবরা মনের আশা পুরণ না হলে নিজ দেবতাকে তিরষ্কার করতো, অপমান করতো, নজরানা পেশ করতো না। যেমন-
ক. একজন আরব কর্তৃক নিজ পিতার হত্যাকারীর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারে ‘যুল খালাসাই’ ঠাকুরের আস্তানায় গমন।
খ. এক আরব কর্তৃক উটের পাল নিয়ে ‘সাদ’ নামক দেবতার বরাবরে হাজির হওয়া।
গ. সাফা মারওয়ায় রক্ষিত মূর্তি আসাফ ও নায়েলার ঘটনা সবাই জানতো।
· তারা বিরুধীতা করতো এ জন্য যেঃ
১. তাদের মাঝে বিরাজ করছিল অন্ধ রক্ষণশীলতা।
২. কুরাইশ পুরোহিতরা এর বিরুদ্ধে হিংসা ও বিদ্বেষ উদ্দীপিত করে তুলেছিল, কেননা তারা মনে করতো আরবে তাদের প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় প্রভাব এবং অর্থ উপার্জনের পথ ঐ দেবতাদের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধ। ঐ ভক্তি-শ্রদ্ধা খতম হলে তারা ঐ গুলো হারাবে।
– মুশরিকদের ধর্ম যে সব উপাদানের উপর প্রতিষ্ঠিত তা তাওহীদের দাওয়াতের মোকাবেলায় গুরুত্বহীন ও মর্যাদাহীন।
– বিধায় কুরআনের আহবান-শিরকমুক্ত, নির্ভেজাল আল্লাহর বন্দেগী এবং আনুগত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।
وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ
“আল্লাহ যে প্রাণকে হারাম করেছেন কোন সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করেনা।”
· যেমন-সন্তান হত্যা বা ভ্রুণ হত্যা। সূরা বনী ইসরাঈলে বলা হচ্ছেঃ
وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيرًا
“দারিদ্রের আশংকায় নিজেদের সন্তান হত্যা করো না। আমি তাদেরেেকও রিযিক দেবো এবং তোমাদেরকেও। আসলে তাদেরকে হত্যা করা একটি মহাপাপ।”
· সূরা বনী ইসরাঈলে কথাটা বলা হয়েছে প্রায় একই ভাষায়ঃ আয়াত-৩৩
وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ
“আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেন, সত্য ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করোনা।”(আয়াত-৩১)
· এখান থেকে আমরা জানলামঃ
– কাউকে বিনা হকে হত্যা করা যাবেনা। এমনকি নিজেকেও, তথা আত্মহত্যা করা যাবেনা। কারণ এটা আল্লাহ হারাম করেছেন। আপনার জান আপনি যেমন খুশী তেমন ব্যবহার করতে পারেন না। এটি ব্যবহৃত হবে আল্লাহর ইচ্ছায়।
– হক পন্থায় হত্যা করা মানেঃ ইহা ৫টি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ-
১. জেনে বুঝে হত্যাকারী থেকে কিসাস নেয়া।
২. আল্লাহর দ্বীন তথা দ্বীনে হকের পথে বাধা দানকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।
৩. ইসলামী হুকুমাত উৎখাত প্রচেষ্টাকারীদেও শাস্তি দেয়া।
৪. বিবাহিত পুরুষ নারী যিনায় লিপ্ত হলে শাস্তি দেয়া।
৫. মুরতাদকে শাস্তি দেয়া।
জন্ম নিয়ন্ত্রণের পরিণামঃ
o মেধাবী সন্তান থেকে বঞ্চিত হওয়া।
o যোগ্য নেতৃত্ব থেকে ইসলামী আন্দোলনকে মাহরুম করা।
وَلَا يَزْنُونَ
“এবং ব্যভিচার করেনা।”
· সূরা বনী ইসরাইলে বলা হয়েছেঃ
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
“যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ এবং খুবই জঘন্য পথ।” (আয়াত-৩২)
· সূরা মুমিনুনে বলা হয়েছেঃ
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ**إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ**فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ
“নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। নিজেদের স্ত্রীদের ও অধিকারভূক্ত বাদীদের ছাড়া, এদের কাছে (হোফজত না করলে) তারা তিরস্কৃত হবেনা। তবে যারা এর বাইরে আরো কিছু চাইবে, তারাই হবে সীমা লংঘনকারী।” (আয়াতঃ ৫-৭
· যিনার নিকটে মানে?
নিম্নোক্ত কাজগুলো কাছে যাওয়া যিনার কাছে যাওয়ার নামান্তরঃ
– মেয়েদের সাথে অপ্রয়োজনে কথা।
– টিভি দেখা। (নিউজ, নাটক, টকশো, বিজ্ঞাপন)
– ইউটুবিং।
– ফেইসবুকিং।
– গান শুনা।
– পিনআপ ম্যাগাজিন।
– খালাত, মামাত, ফুফাত, চাচাত, তালতো বোন।
– চাচী, মামী গং।
وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا
“এসব যে-ই করে সে তার গোনাহের শাস্তি ভোগ করবে।”
· أثام এর তাফসীর করেছেন আবু উবাইদা (গোনাহের শাস্তি)।
কেউ কেউ أثام বলেছেন, এটি জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম, যা নির্মম শাস্তিতে পূর্ণ।
﴿يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا﴾
৬৯- কিয়ামাতের দিন তাকে উপর্যুপরি শাস্তি দেয়া হবে এবং সেখানেই সে পড়ে থাকবে চিরকাল লাঞ্ছিত অবস্থায়।
· এর দু’টি অর্থ হতে পারে-
১. শাস্তির ধারা খতম হবেনা, একের পর এক শাস্তি জারি থাকবে।
২. প্রতিটি অপরাধের জন্য পৃথক পৃথক ভাবে পৃথক পৃথক সময়ে ধারাবাহিক ও আলাদা করে শাস্তি দেয়া হবে।
﴿إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا﴾
৭০- তবে তারা ছাড়া যারা (ঐসব গোনাহের পর) তাওবা করেছে এবং ঈমান এনে সৎকাজ করতে থেকেছে। এ ধরনের লোকদের অসৎ কাজগুলোকে আল্লাহ সৎকাজের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন এবং আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।
إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا
“তবে তারা ছাড়া যারা (ঐসব গোনাহের পর) তাওবা করেছে এবং ঈমান এনে সৎকাজ করতে থেকেছে।”
· আল্লাহর উদ্দেশ্য সমাজ অপরাধী ও কলুষমুক্ত করে সত্যকামী ও কল্যাণকামীতে ভরপুর করা।
· ‘আশংকা জনক আগামী’ মানুষকে হতাশ করে, ভাল হতে বাঁধার সৃষ্টি করে।
· ‘সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত’ মানুষকে উৎসাহিত করে এবং মানুষকে ভাল হতে সহযোগিতা করে।
· সমাজকে কলুষমুক্ত ও অপরাধ মুক্ত করার একটি প্রয়াস হিসাবে এটি একটি কৌশল “সাধারণ ঘোষণা”।
· নবী সা. এর জীবনের নানাবিধ উদাহরণ, যা তাওবার সুযোগের কারণে মানুষকে ভাল করেছে। যেমন-
o আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদীস-যিনাকারী মহিলা সংক্রান্ত।
o এক বৃদ্ধের ঘটনা-
فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ
“এ ধরনের লোকদের অসৎ কাজগুলোকে আল্লাহ সৎকাজের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন।”
· অসৎ কাজকে সৎ কাজ দিয়ে বদলানো- এর দু’টি অর্থ হতে পারে-
১. তাওবার বরকতে আল্লাহ বদীর পরিমাণ নেকী করা সুযোগ দেবেন।
২. কুফরী ও গোনাহীর জীবনের আমলগুলো খাতা থেকে কেটে ফেলা হবে এবং এর বদলা নেকী লেখা হবে। এবং যতবার যে চাইবে, ততবার সে পাবে। বিধায় তার নেকীর পরিমাণ বেশী হয়ে যাবে।
o তাফসীরে জালালাইনে বলা হয়েছে–
أولئك يبدل الله سيأتهم حسنات (في الأخرة)، وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
“এবং আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।”
﴿وَمَن تَابَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَإِنَّهُ يَتُوبُ إِلَى اللَّهِ مَتَابًا﴾
৭১- যে ব্যক্তি তাওবা করে সৎ কাজের পথ অবলম্বন করে, সে তো আল্লাহর দিকে ফিরে আসার মতই ফিরে আসে।
· ফিরে আসার মত ফিরে আসে। মানে-
o প্রকৃতিগত ভাবে এটাই আসল ফিরে আসার জায়গা।
o নৈতিক দিকে দিয়ে এটাই আসল যেখানে ফিরে আসা উচিত।
o ফলাফলের দিক দিয়ে এ দিকে ফিরে যাওয়াই লাভ জনক।
o দ্বিতীয় কোন জায়গা নেই, যেখানে গিয়ে মানুষ শাস্তি থেকে বাঁচতে পারবে।
o দ্বিতীয় কোন জায়গা নেই, যেখানে গিয়ে মানুষ পুরস্কার পাবে।
o এমন এক দরবার-যেখানে ফিরে যায়, যেখানে ফিরে যাওয়া যেতে পারে।
o সে দরবার সর্বোত্তম দরবার।
o যেখানে থেকে সকল কল্যাণ উৎসরিত হয়।
o যেখানে থেকে লজ্জিত আসামীদের তাড়িয়ে দেয়া হয়না। বরং ক্ষমা করার পর পুরস্কৃত করা হয়।
o যেখানে ক্ষমা প্রার্থনাকারীর অপরাধ গণনা না করে, কতটুকু তাওবা করল, তা দেখা হয়।
যেখানকার মালিক প্রতিশোধ পরায়ন নন, বরং রহমতের ভান্ডারের অধিপতি।
সময়ে।
শিক্ষনীয় বিষয়
১. জমীনকে চাষ করতে হবে। জমীনের বুকে কাজ করতে হবে।
২. জমীনে চলতে হবে ভদ্র মানুষের মতো।
৩. অহেতুক বিতর্কে না জড়ানো। বেহুদা বিতর্ক এড়িয়ে চলা।
৪. রাতের নামায ও দোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৫. আর্থিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছল হতে হবে। কৃপনতা ও অপচয় পরিহার করতে হবে।
৬. সকল ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের মাপকাটি আল্লাহর গোলামী।
৭. প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মানুষ হত্যা থেকে বেঁচে থাকা।
৮. সকল ধরণের যিনা থেকে বাঁচতে হবে। পর্দা মেনে চলা, পরিবারে পর্দা প্রতিষ্ঠা করা।
৯. বাজে ও বেহুদা কাজে না জড়ানো।
১০. আল্লাহর আয়াত তথা নির্দেশের আলোকে জীবন যাপন করা।
মোহাম্মদ আবু হানিফ হেলাল
-আহবায়ক, বাংলাদেশ মাদ্রাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ, ফেনী জেলা।
No comments