মুহাররম মাসের মর্যাদা ও ফজিলত
হিজরি সনের প্রথম মাস মুহাররম। কুরআনে বর্ণিত চারটি হারাম মাস বা সম্মানীত মাস হচ্ছে জিলকদ, জিলহজ্জ, মুহাররম ও রজব। এই চার মাসে যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ। সকল পাপাচার অন্যান্য মাসে যেমন নিষিদ্ধ , এমাসে আরাে কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। হাদীস শরীফে মুহাররম মাসকে শাহরুল্লাহ বা আল্লাহর মাস বলে অভিহিত করা হয়েছে। কুরআন ও হাদীস দ্বারা মুহাররম মাসের মর্যাদা ও ফজিলত সুসংহত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে বর্তমানে মুসলিম সমাজে আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপরে উল্লেখিত তাৎপর্যের ব্যতিক্রম। বর্তমানে শিয়া সম্প্রদায়ের শিরক-বিদআতী আক্বিদা ও কর্মকান্ডের কারণে মুহাররম ও আশুরা বলতেই অনেকে কেবল কারবালার মর্মান্তিক ইতিহাসকেই বুঝে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, মুহাররম ও আশুরার দিবসের মর্যাদা, ফজিলত ও আমলসমূহ কারবালার ঘটনার অন্তত ৫০ বছর আগেই সুস্পষ্ট ভাবে কুরআন ও হাদীস দ্বারা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে।
আজকের এই পােস্টে কুরআন, হাদীসের আলােকে হক্কানী আলেমদের মাধ্যমে প্রাপ্ত বক্তব্যগুলাের সারসংক্ষেপ তুলে ধরার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ। এই লেখার মাধ্যমে আমরা জানতে পারব কুরআন ও সুন্নাহ এর আলােকে মুহাররম মাসের মর্যাদা, ফজিলত, আমল ও করণীয় সম্পর্কে। এছাড়াও জানব মুহাররম মাসের বিশেষ ঘটনাবলী সম্পর্কে। এমন কিছু ঘটনা সম্পর্কেও আলােকপাত করা হবে যেগুলাে সমাজে প্রচলিত রয়েছে কিন্তু তা বিশুদ্ধতার মানদন্ডে উত্তীর্ণ হতে পারে নাই। পাশাপাশি জানবো মুহাররম মাস সম্পর্কে কিছু কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারনা সম্পর্কে।

২০২৩ সালের আশুরা কত তারিখে ?
২০২৩ সালের মহরমের ১০ তারিখ বা আশুরার তারিখ ২৯ জুলাই ২০২৩ইং রোজ শনিবার। তাই আমরা রােজা রাখব- ২৮-৩০ জুলাই বা ২৮-২৯ জুলাই বা ২৯-৩০ জুলাই যে কোনাে দুই দিন । শুধু এই দুই দিনই নয়, আমরা সাধ্য মত মুহাররম মাসের পুরােটা জুড়েই বেশি বেশি নফল রােজা রাখার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ । মুহাররম মাসের আইয়ামে বীজের রােজাগুলাের তারিখ হচ্ছে ০১ , ০২ ও ০৩ আগস্ট ২০২৩ । ১৪৪৫ হিজরির মুহাররম মাসের দিন গণনা শুরু হচ্ছে ২০ জুলাই ২০২৩ ইং তারিখ থেকে ।

মুহাররম সম্মানীত মাসঃ প্রাসঙ্গিক কুরআনের আয়াত:-
কুরআনুল কারীমে চারটি মাসকে সম্মানীত ও হারাম মাস হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে । এই চারটি মাসে যুদ্ধবিগ্রহ ও নিজের প্রতি জুলুম বা পাপ কাজ বিশেষ ভাবে নিষিদ্ধ ।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
اِنَّ عِدَّۃَ الشُّهُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰهِ اثۡنَا عَشَرَ شَهۡرًا فِیۡ کِتٰبِ اللّٰهِ یَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ مِنۡهَاۤ اَرۡبَعَۃٌ حُرُمٌ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ۬ۙ فَلَا تَظۡلِمُوۡا فِیۡهِنَّ اَنۡفُسَکُمۡ وَ قَاتِلُوا الۡمُشۡرِکِیۡنَ کَآفَّۃً کَمَا یُقَاتِلُوۡنَکُمۡ کَآفَّۃً ؕ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الۡمُتَّقِیۡنَ
অনুবাদঃ নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাসগুলাের সংখ্যা বারটি , তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তার মধ্যে তােমরা নিজেদের প্রতি জুলুম কর না এবং তােমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তােমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে এবং জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের সঙ্গে আছেন। (সূরা তাওবা, আয়াত ৩৬)
উক্ত আয়াতে চারটি নিষিদ্ধ মাস বলতে মুহাররমকেও বুঝানাে হয়েছে । যা বিভিন্ন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ।

মুহাররম সম্মানীত মাসঃ প্রাসঙ্গিক হাদীস:-
নবীজির (সা:) বিদায় হজ্জের ভাষণ সম্পর্কে বুখারী শরীফের একটি হাদীসের অংশ বিশেষ নিচে তুলে ধরা হলাে । যেখানে চারটি নিষিদ্ধ মাসের পরিচয় দেয়া হয়েছেঃ
عَنْ أَبِيْ بَكْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ الزَّمَانُ قَدْ اسْتَدَارَ كَهَيْئَةِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ثَلَاثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِيْ بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ
“ সময় ও কাল আবর্তিত হয় নিজ চক্রে। যেদিন থেকে আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এক বছর হয় বার মাসে। এর মধ্যে চার মাস সন্মানিত। তিনমাস ক্রমান্বয়ে আসে - যেমন যিলকদ , যিলহাজ্জ ও মুহাররম এবং রজব, যা মুদার বা জমাদিউল আখির ও শাবান মাসের মাঝে হয়ে থাকে।” ( বুখারী ৪৪০৬)

মুহাররম মাসের রােজার ফজিলত ও আমল:-
মুহাররম মাসে আমরা কী কী আমল করতে পারি সে ব্যাপারে আলেমগণ নিচের বিষয়গুলাে উল্লেখ করেছেনঃ
০১. একান্ত অপারগ না হলে শুধুমাত্র আশুরার দিন অর্থাৎ মহরমের ১০ তারিখ একটি মাত্র রােজা রাখা অনুচিত । বরং আমাদের উচিত মুহাররমের ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ অন্তত দুই দিন রােজা রাখা ।আশুরার রােজা দুইটি রাখা উত্তম ।
০২. নবীজি (সা:) বলেছেন মুহাররম আল্লাহর মাস । তাই এতে বেশি বেশি রােজা রাখা চাই । এমাসের আইয়ামে বীজের রােজা এবং সপ্তাহের সােম ও বৃহস্পতিবারের রােজাগুলাে রাখার চেষ্টা করি ।
০৩. তওবা ইস্তিগফার করা । এ মাসে অতীতের একটি গােত্রের তওবা কবুল করা হয়েছিল । ইনশাআল্লাহ পরবর্তীদের অনেকের তওবা এই মাসে কবুল হবে ।
০৪. দরুদ শরীফ পড়া । তওবা - ইস্তিগফার ও দুআ কবুলের জন্য অন্যতম নিয়ামক হচ্ছে দরুদ শরীফ পড়া । তাই যখনই আমরা ইস্তেগফার বা দুআ করব সাথে সাথে দরুদ পাঠ করব ।
০৫. এটা যেহেতু সম্মানীত মাস , তাই এ মাসের সম্মানে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে ।

নিচে মুহাররমের রােজা সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলােঃ
★হাদীস ১
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ صِيَامِ شَهْرِ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ "
আবূ হুরায়রা ( রাঃ ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু ' আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেনঃ রমযান মাসের রােযার পরে আল্লাহ তা'আলার মাস । মুহাররমের রােযাই সবচেয়ে ফাযীলাতপূর্ণ ।
-(তিরমিযি ৭৪০, ইবনু মাজাহ ১৭৪২)
★হাদীস ২
عَلِيٍّ، قَالَ سَأَلَهُ رَجُلٌ فَقَالَ أَىُّ شَهْرٍ تَأْمُرُنِي أَنْ أَصُومَ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ قَالَ لَهُ مَا سَمِعْتُ أَحَدًا يَسْأَلُ عَنْ هَذَا إِلاَّ رَجُلاً سَمِعْتُهُ يَسْأَلُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا قَاعِدٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَىُّ شَهْرٍ تَأْمُرُنِي أَنْ أَصُومَ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ قَالَ " إِنْ كُنْتَ صَائِمًا بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ فَصُمِ الْمُحَرَّمَ فَإِنَّهُ شَهْرُ اللَّهِ فِيهِ يَوْمٌ تَابَ اللَّهُ فِيهِ عَلَى قَوْمٍ وَيَتُوبُ فِيهِ عَلَى قَوْمٍ آخَرِينَ "
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেছেন , এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ন করল , রামাযান মাসের পর কোন মাসের রােযা রাখতে আপনি আমাকে আদেশ করেন ? তিনি তাকে বললেন , এই বিষয়ে আমি কাউকে রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু ' আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) -এর নিকট প্রশ্ন করতে শুনিনি । তবে হ্যাঁ এক সময় আমি রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এর নিকটে বসা ছিলাম । এই সময় এক ব্যক্তি এসে তাঁকে বলল , হে আল্লাহর রাসূল ! রামাযান মাসের পর আর কোন মাসের রােযা পালনে আপনি আমাকে আদেশ করেন ? রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু ' আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেনঃ রামাযান মাসের পর তুমি যদি আরাে রােযা রাখতে ইচ্ছুক হও তবে মুহাররামের রােযা রাখ । যেহেতু এটা আল্লাহ তা'আলার মাস । এই মাসে এমন একটি দিবস আছে যেদিন আল্লাহ তা'আলা এক গােত্রের তাওবা কবুল করেছিলেন এবং তিনি আরােও অনেক গােত্রের তাওবাও এই দিনে কবুল করবেন । (তিরমিযি ৭৪১)
তাই আসুন, আমরা মুহাররম মাস জুড়েই সাধ্য মত বেশি বেশি রােজা রাখি। বিশেষ করে প্রতি সপ্তাহের সােমবার ও বৃহস্পতিবার এবং হিজরি মাসের ১৩ , ১৪ , ১৫ তারিখের আইয়ামে বীজের রােজাগুলাে রাখি । কারণ মুহাররম আল্লাহর মাস । আর রােজাও শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য । এবং আল্লাহ ঘােষণা করেছেন রােজার প্রতিদান তিনি নিজেই দিবেন ।

আশুরা শব্দের অর্থ কী ? আশুরার রােজার গুরুত্ব ও ফজিলত:-
আশুরা শব্দের অর্থ দশম। ইসলামী পরিভাষায় মুহাররমের দশ তারিখকে আশুরা বলা হয়। এ দিনটিতে নবীজি (সা) বিশেষ গুরুত্ব সহকারে রােজা রাখতেন। ইহুদীরাও আশুরার দিন রােজা রাখত। তাদের সাথে পার্থক্য করার জন্য নবী (সা) মুহাররমের ১০ তারিখের সাথে এর আগে বা পরে একদিন বেশি রােজার রাখতে উৎসাহ দিয়েছেন।
عَنِ ابْنِ، عَبَّاسٍ - رضى الله عنهما - قَالَ قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ فَوَجَدَ الْيَهُودَ يَصُومُونَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَسُئِلُوا عَنْ ذَلِكَ فَقَالُوا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي أَظْهَرَ اللَّهُ فِيهِ مُوسَى وَبَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى فِرْعَوْنَ فَنَحْنُ نَصُومُهُ تَعْظِيمًا لَهُ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " نَحْنُ أَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ " . فَأَمَرَ بِصَوْمِهِ .
ইবনু ' আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন , রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (হিজরত করে) মাদীনায় এলেন এবং তিনি ইয়াহূদীদেরকে আশুরার দিন সিয়াম পালন করতে দেখতে পেলেন । এরপর তাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর তারা বলল , এ সে দিন যে দিন আল্লাহ মূসা (আঃ) ও বাণী ইসরাঈলকে ফির'আউনের উপর বিজয়ী করেছেন । তাঁর সম্মানার্থে আমরা সওম পালন করে থাকি । তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ' আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন , আমরা তােমাদের চেয়েও মূসা (আঃ) এর অধিক নিকটবর্তী । এরপর তিনি এ দিনে সওম পালন করার নির্দেশ দিলেন । ( মুসলিম ২৫৪৬ )

আশুরার দিনের রােজার গুরুত্ব:-
নফল রােজা রাখার ক্ষেত্রে নবী ( সা ) আশুরার দিনের রােজাকে অন্যান্য সকল দিনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন ।
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلاَّ هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন , আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আশুরার দিনের সওমের উপরে অন্য কোন দিনের সওমকে প্রাধান্য প্রদান করতে দেখিনি। এবং এ মাস অর্থাৎ রমযান মাস এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করতেও দেখিনি। ( বুখারী ২০০৬, মুসলিম ১১৩২)

আশুরার দিনের রােজার ফজিলত:-
মহরমের ১০ তারিখ তথা আশুরার দিন রােজা রাখলে পূর্ববর্তী এক বছরের সগিরা গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন ।
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ "
আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলার নিকট আমি আশাপােষণ করি যে , তিনি আশূরার রােযার মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন । (তিরমিযি ৭৫২, ইবনু মাজাহ১৭৩৮)

আশুরার জন্য রােজা কয়টা রাখবো??
ইহুদীরা আশুরার দিন রােজা রাখত । নবী (সা) তাদের সাথে সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে মুহাররমের ১০ তারিখের সাথে এর আগে বা পরে মােট দুইটি রােজা রাখতে উৎসাহ দিয়েছেন । তাই আমাদের উচিত অন্তত দুইটি রােজা রাখা । বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাতহুল বারীতে ইবনে হাজার আসকালানী (রহ) বলেন, আশুরার রােজার সর্বোত্তম অবস্থা হচ্ছে মুহাররমের ৯ , ১০ ও ১১ তারিখ ৩ টি রােজাই রাখা । কারণ পুরাে মুহাররম মাস ব্যাপী রােজার ফজিলতের কথা সহীহ হাদীসে রয়েছে।
عَبْدَ اللَّهِ، بْنَ عَبَّاسٍ - رضى الله عنهما - يَقُولُ حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ - إِنْ شَاءَ اللَّهُ - صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ " . قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আশুরার দিন সিয়াম পালন করেন এবং লােকদের সিয়াম পালনের নির্দেশ দেন, তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়াহুদী এবং নাসারা এই দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সিয়াম পালন করব । বর্ণনাকারী বলেন, এখনাে আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তেকাল হয়ে যায়। ( মুসলিম ২৫৫৬ )
অপর একটি হাদীসের বর্ণনায় পাওয়া যায়ঃ “ তােমরা আশুরার রােযা রাখ এবং ইহুদীদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে ; আশুরার আগে বা পরে আরাে একদিন রােযা রাখ । ' - মুসনাদে আহমদ ১/২৪১

রমজানের রােজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রােজা ফরজ ছিল:- রমজানের ১ মাস রােজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রােজা ফরজ ছিল । যখন রমজানের রােজাকে ফরজ করা হলাে তখন আশুরার রােজার বিধান আর ফরজ থাকে নি বরং আশুরার রােজার বিধান হয়ে যায় নফল ।
أَنَّ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ تَصُومُهُ قُرَيْشٌ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَكَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَصُومُهُ فَلَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ صَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تَرَكَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَمَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে কুরাইশগণ আশুরার রােজা রাখত এবং আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও এ সওম পালন করতেন । যখন তিনি মাদীনায় আগমন করেন তখনও এ সওম পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন । যখন রমযানের সওম ফরয করা হল তখন আশূরার সওম ছেড়ে দেয়া হলাে , যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না । (বুখারী ২০০২)
মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে আশুরার রােজার ব্যাপারে আরেকটু বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে ।
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَزِيدَ، قَالَ دَخَلَ الأَشْعَثُ بْنُ قَيْسٍ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ وَهُوَ يَتَغَدَّى فَقَالَ يَا أَبَا مُحَمَّدٍ ادْنُ إِلَى الْغَدَاءِ . فَقَالَ أَوَلَيْسَ الْيَوْمُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ قَالَ وَهَلْ تَدْرِي مَا يَوْمُ عَاشُورَاءَ قَالَ وَمَا هُوَ قَالَ إِنَّمَا هُوَ يَوْمٌ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَصُومُهُ قَبْلَ أَنْ يَنْزِلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فَلَمَّا نَزَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ تُرِكَ .
আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আশ'আস ইবনু কায়স (রাঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) এর নিকট গেলেন। তখন তিনি দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, হে আবু মুহাম্মাদ ! তুমি খাওয়ার জন্য কাছে এসাে । তিনি বললেন , আজ কি আশূরার দিন নয় ? তিনি বললেন, তুমি কি জান! আশূরা দিন কী? আশ'আস (রাঃ) বললেন, সে আবার কী ? তিনি বললেন , রমাযানের সিয়াম ফরয হওয়ার পূর্বে এ দিন রসূলুল্লাহ (সা:) সিয়াম পালন করতেন। যখন রমাযানের সিয়াম ফরয হ'ল তখন তা ছেড়ে দেয়া হ'ল। (মুসলিম ২৫৩৮)
মোহাম্মদ আবু হানিফ হেলাল
-আহবায়ক, বাংলাদেশ মাদ্রাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ, ফেনী জেলা।
No comments